Shantipur Fulia Tant

জিআই স্বীকৃতি লাভে আশা ফুলিয়ার তাঁতিদের

জিআই তকমা পাওয়ায় শাড়ি বিপণনের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তাঁতশিল্পীরা। টাঙ্গাইলের উপরে জামদানির কাজের জন্য পদ্মশ্রী পেয়েছেন ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বীরেন বসাক।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৫
তাঁত শিল্পী।

তাঁত শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।

টাঙ্গাইলের হস্তচালিত তাঁতশিল্পের এক ঘরানা বহন করে আসছেন ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীরা। মিহি সুতোয় তৈরি সেই শাড়ি নাকি গলে যেতে পারে একটা আংটির মধ্যে দিয়েও। সেই টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি লাভে ভিন্ রাজ্যের শাড়ির সঙ্গে লড়াইয়ে আশার আলো দেখছে ফুলিয়া।

Advertisement

অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল এলাকার শিল্পীদের তৈরি শাড়ির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। মিহি সুতোয় তৈরি এই শাড়ির চাহিদা মূলত শিল্পীদের হাতে তৈরি সুদৃশ্য এবং সুক্ষ নকশার কারণে। বহু বছর আগে বাংলাদেশের সেই টাঙ্গাইল থেকেই তাঁতশিল্পীরা এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ফুলিয়ায়। তাঁতশিল্পের সেই ঘরানা এখানেও প্রবাহিত হয়েছে তাঁদের হাত ধরে। সেই ধারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহন করে নিয়ে আসছে রাজ্যের বয়ন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। তবে সম্প্রতি শান্তিপুর ফুলিয়ার হস্তচালিত তাঁতশিল্পকে এক অন্য চ্যালেঞ্জের সামনেও পড়তে হয়েছে। হস্তচালিত তাঁতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যন্ত্রচালিত তাঁত। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা শাড়ি। বিশেষত, পশ্চিম ভারত থেকে আসা শাড়ির দাপটে ক্রমশ বিপণনের ক্ষেত্রে সঙ্কটে পড়ছে শান্তিপুর এবং ফুলিয়ার হস্তচালিত তাঁত। পশ্চিম ভারত থেকে আসা যন্ত্রচালিত তাঁতে তৈরি এই কাপড়ের দাম অনেকটাই কম। তবে শিল্পের গুণমানে তা অনেকটাই পিছিয়ে বলে দাবি শিল্পীদের। আবার, যন্ত্রচালিত তাঁতে হস্তচালিত তাঁতের তুলনায় অনেক গুণ বেশি কাপড় উৎপন্ন করা যায়। ফলে, হস্তচালিত তাঁতের তুলনায় এই সমস্ত যন্ত্রচালিত তাঁতে বা ভিন্ন রাজ্যের শাড়ি অনেক বেশি পরিমাণে চলে আসছে বাজারে। আর শিল্পের ছোঁয়া থাকা হস্তচালিত তাঁতে ওই কাপড় তৈরি করতে সময় লাগছে অনেক বেশি। অনেক সময়েই ক্রেতারা মূল্যের প্রশ্নে গুণমানের সঙ্গে আপস করছেন বলে মনে করছেন তাঁতশিল্পীরা। যে কারণেই ক্রেতারা ভিন্ রাজ্যের বা যন্ত্রচালিত তাঁতে তৈরি শাড়ির দিকেই ঝুঁকছেন।

তবে এ বার জিআই তকমা পাওয়ায় শাড়ি বিপণনের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তাঁতশিল্পীরা। টাঙ্গাইলের উপরে জামদানির কাজের জন্য পদ্মশ্রী পেয়েছেন ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বীরেন বসাক। তিনি বলেন, ‘‘বাইরের শাড়ি এসে যে সমস্যা তৈরি করছে, তা থেকে মুক্তি পেতে এটা জরুরি ছিল।’’ তাঁর মতে, ১০০ কাউন্টের সুতো দিয়ে মূলত এই শাড়ি তৈরি হয়েছে। এখন এর চেয়ে বেশি কাউন্টের সুতো দিয়েও এই শাড়ি হচ্ছে। অন্তত ৪০০ বা ৫০০ কাউন্টের সুতো দিয়ে তৈরি এই টাঙ্গাইল শাড়ি গলে যেতে পারে একটা আংটির মধ্যে দিয়েও, দাবি ওই তাঁতশিল্পীর। শান্তিপুরের তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তারক দাস বলেন, ‘‘এই তকমা দরকার ছিল। আমরা চাইছি, যাঁরা এই জিআই তকমা ব্যবহার করবেন, তাঁরা ভিন্‌ রাজ্যের শাড়ির ব্যবসা করতে পারবেন না— এটা চালু হোক।’’

ফুলিয়ার বিশিষ্ট তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সুশীল বসাক বলেন, ‘এটা আমাদের কাছে গর্বের, আনন্দেরও। অন্তত ভিন্‌ রাজ্যের শাড়ি বাজারে এসে যে সমস্যা তৈরি করছে, তা থেকে নিজেদের শাড়ি আলাদা করে চিহ্নিত করার জন্য এর দরকার রয়েছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement