থানার সামনে বিক্ষোভ মহিলাদের। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
জঙ্গিপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। বিধায়ক জাকির হোসেন ও পুর প্রশাসক মোজাহারুল ইসলামের দ্বন্দ্বও ক্রমেই যেন বাড়ছে। দিনকয়েক আগে দুই নেতার অনুগামীদের গোলমালে আহত হয়েছিলেন গাব্বার শেখ নামে এক তৃণমূলকর্মী। এলাকায় তিনি মোজাহারুলের অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানা গিয়েছে। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পরেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। বর্তমানে কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি তিনি।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার গাব্বারের স্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গিপুরের বাসিন্দা কয়েকশো মহিলা রঘুনাথগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, জাকিরের অনুগামীদের হাতে প্রহৃত হয়ে মৃত্যুমুখে গাব্বার। অথচ, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর হচ্ছে না। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন থানার সামনে ধর্নায় বসেন তাঁরা। পরে আইসির সঙ্গে দেখা করেন গাব্বারের স্ত্রী সেলিনা বিবি। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি ফিরোজ শেখ, তাঁর ভাই-সহ মোট ছ’জন।
পরে গাব্বারের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, “আমার স্বামী হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন। অথচ, অভিযুক্তরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। খুনের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ কিছুই করতে পারবে না বলে শাসাচ্ছে। এরপরও যদি পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে তৎপর না হয়, তবে আরও জোরদার আন্দোলন হবে।’’
তবে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের অনুমান, এ দিনের বিক্ষোভ-ধর্নায় প্রচ্ছন্ন ‘মদত’ রয়েছে পুর প্রশাসক গোষ্ঠীর। এ দিন এই অভিযোগ করেছেন জাকির-অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষও। তিনি বলেন, “গাব্বারকে মারধরে ফিরোজ বা তার সঙ্গীরা জড়িত নয়। মিথ্যে মামলা সাজাচ্ছে পুর প্রশাসকের দল। গাব্বার গোলমালের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। তাঁর আহত হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। ওঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করার পাশাপাশি পুলিশকেও আবেদন করেছি, তদন্ত করে আসল ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে।”
ওই তৃণমূল নেতার আরও অভিযোগ, ‘‘পুরসভাকে রাজনীতির আখড়ায় পরিণত করা হচ্ছে। বহু পুরকর্মী নিজের কাজ ছেড়ে পুর প্রশাসকের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে পুরকর্মীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরকর্মীদের কেউ নিগ্রহ করেনি। হুমকিও দেওয়া হয়নি।”
রাজ্যে দ্বিতীয় দফায় পুর নির্বাচনের দিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিপুর পুরসভাতেও নির্বাচন হওয়ার কথা। এই অবস্থায় তৃণমূলের দুই নেতা জাকির ও মোজাহারুলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমে বাড়তে থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও।