মাইকে ছাত্রীদের ডাক শিক্ষকের। বুধবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ফর্ম জমা দিতে হবে। এ দিকে, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারছে না। তাই এ বার পড়ুয়াদের দুয়ারে দুয়ারে স্কুলই ফর্ম নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। কৃষ্ণনগর সংলগ্ন ভাতজাংলা-কালিপুর হাইস্কুলে এই ধরনের ‘দুয়ারে স্কুল’ পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের পদক্ষেপ দৃষ্টান্তমূলক।
ভাতজাংলা-কালিপুর হাইস্কুলে ৫৮৯ জন সংখ্যালঘু ছাত্রী ‘ঐক্যশ্রী’ ভাতা, ৫১২ জন তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসি ছাত্রীর ‘শিক্ষাশ্রী’ ও ৫১০ জন ছাত্রীর ‘কন্যাশ্রী’ ভাতা পাওয়ার যোগ্য বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। স্কুলে আসছে না পড়ুয়ারা। তা ছাড়া, এই করোনাকালে তারা স্কুলে এলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকে, শিক্ষা দফতর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত ফর্ম জমা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এই অবস্থায় চিন্তায় পড়ে যান স্কুলের শিক্ষকেরা। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে উপায় বাতলে দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সজিত সরকার। তিনি জানিয়ে দেন, পড়ুয়ারা স্কুলে না আসতে পারলে তিনিই যাবেন পড়ুয়াদের কাছে। পড়ুয়াদের দুয়ারে গিয়ে পূরণ করিয়ে আনবেন জরুরি ফর্ম। যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। বুধবার একটি টোটোর মাথায় মাইক বেঁধে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। ফর্ম নিয়ে প্রধান শিক্ষকরে সঙ্গী হলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক শুভঙ্কর প্রামাণিক। টোটোয় করে তাঁরা সারা দিন ঘুরেছেন গ্রামে গ্রামে। গ্রামের মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইকে ডাকতে থাকেন নিজের স্কুলের পড়ুয়াদের।
প্রধান শিক্ষকের ডাকে সাড়া দিয়ে পৌঁছে যায় পড়ুয়ারাও। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তারা এ দিন ফর্ম ফিলাপ করতে থাকে। তাদের এই কাজে সহযোগিতা করেন শুভঙ্কর। পড়ুয়াদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বুধবার সকাল থেকে স্কুলের আশেপাশের গ্রামগুলিতে ঘুরে বেরাল স্কুল। রোদে-গরমে ঘামতে ঘামতে পড়ুয়াদের সঙ্গে অনর্গল কথা বললেন দুই শিক্ষক। কী ভাবে ফর্মপূরণ করতে হবে, তা জনে জনে বুঝিয়ে দিতে দেখা গেল তাঁদের।
বুধবার দুপুরে ভাতজাংলা পশ্চিমপাড়ার মোড়ে একদল ছাত্রীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক শুভঙ্কর বলছেন, “আমরা মনে করি, এটাও শিক্ষকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা একটু পরিশ্রম করলে যদি মেয়েগুলো ভাতা পায়, তা হলে সেই পরিশ্রম আমাদের করা উচিত বলেই আমরা মনে করি।”
‘শিক্ষাশ্রী’ ফর্ম হাতে বর্ধনপাড়ার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী সরকার এবং ‘ঐক্যশ্রী’ ফর্ম পূরণ করতে করতে ভান্ডারখোলা মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মাম্পি খাতুনরা বলছে, “আমরা তো ভেবেই ছিলাম যে, এ বার বুঝি আর কোনও ভাতারই ফর্মপূরণ করে জমা দেওয়া হবে না। তবে প্রধান শিক্ষক যে নিজেই এ ভাবে আমাদের কাছে চলে আসবেন, তা ভাবতেও পারিনি।”
আর যার এই ভাবনা, সেই প্রধান শিক্ষক সজিত সরকার বলছেন, “যত দিন না একশো শতাংশ মেয়ে ফর্ম জমা করছে, তত দিনই আমরা বুধবার করে এ ভাবেই ফর্ম নিয়ে বের হব।” মেয়েদের টাকা পাওয়ার প্রশ্ন যে!