BJP

BJP: আইন রদের উচ্ছ্বাসে মুষড়ে সঙ্ঘ-বিজেপি

মোদী সরকার শেষ পর্যন্ত তিনটি আইন প্রত্যাহার করায় বাম-সহ সব আন্দোলনকারীরা যেমন উল্লসিত, তেমনই ম্রিয়মাণ বিজেপি-আরএসএস শিবির।  

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৪
কৃষি আইন বাতিলের পর মিছিল। কৃষ্ণনগরে শুক্রবার।

কৃষি আইন বাতিলের পর মিছিল। কৃষ্ণনগরে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গোটা দেশের সঙ্গে পা মিলিয়েছিল নদিয়াও। মিটিং-মি‌ছিল, ধর্না কিছুই বাদ যায়নি। মোদী সরকার শেষ পর্যম্ত তিনটি আইন প্রত্যাহার করায় বাম-সহ সব আন্দোলনকারীরা যেমন উল্লসিত, তেমনই ম্রিয়মাণ বিজেপি-আরএসএস শিবির।

কৃষি আইন প্রত্যাহারের ‘সুসংবাদ’ এ দিন উদ্‌যাপন করেছে সব বামপন্থী দলই। শুক্রবার বিকেলে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে পথসভা করে আরএসপি। পথে নামে এসইউসি-ও। সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক মেঘলাল শেখ বলেন, “তিনটি কালা আইনে বাতিলের পাশাপাশি ফসলের দাম বৃদ্ধি রোখার মতো আরও কয়েকটি দাবি আমরা করেছিলাম। এখন বাকি দাবিগুলি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না কেন্দ্র সরকার সেটা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।” আগামী ২৬ নভেম্বর প্রতিটি ব্লকে আন্দোলন কর্মসূচি হবে বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

‘বিশ্বের বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয়’-এর প্রতি সংহতি জানিয়ে সন্ধ্যায় বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে রানাঘাট শহরের চৌরঙ্গি মোড়ে ‘বিজয় স্মারক সভা’র আয়োজন করা হয়েছিল। মিছিলও করা হয়েছে। রানাঘাট কৃষক সংহতি মঞ্চের তরফে পথসভা করা হয়। কৃষক সভার কল্যাণী ব্লক কমিটির ডাকে সন্ধ্যায় মদনপুর বাজারেও মিছিল করা হয়।

প্রস্তাবিত কৃষি বিল তথা আইনের বিরুদ্ধে নদিয়ায় সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ধর্না আন্দোলন হয়েছিল রাজনৈতিক ঝান্ডা সরিয়ে রেখেই। গত বছর ১৫ ডিসেম্বর থেকে দেবগ্রাম পুরনো বাসস্ট্যান্ডে শুরু হওয়া এই নাগরিক অবস্থান চলে একটানা ৪৩ দিন, গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। রানাঘাট এবং কৃষ্ণনগরেও ‘কৃষক সংহতি মঞ্চ’-এর ডাকে কয়েক দিনের ধর্না হয়।

সেই মঞ্চের আহ্বায়ক শেষাদ্রী রায়ের মতে, “বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিস্ট কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তারই একটা অংশ ছিল এই তিনটি কৃষি আইন। সেই কৃষি আইন প্রত্যাহার দেখিয়ে দিল যে সুসংগঠিত ও দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে যে কোনও আগ্রাসন রুখে দেওয়া সম্ভব।”

কৃষি আইন রদের খবর পাওয়ার পরে খুশি গোপন রাখেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও। কিসান ও খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসের নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি দীপক বসুর দাবি, “মোদী সরকার যে কৃষি আইন এনেছিল তা পুরোপুরি অগতান্ত্রিক ও কৃষক স্বার্থের বিরোধী। আমরা প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে এসেছি। আমাদের প্রতিনিধিরাও গিয়েছিলেন ধর্ণামঞ্চে। এই জয় মানুষের জয়।”

উল্টো দিকে, মোদীর ঘোষণার আকস্মিকতায় কার্যত থমকে গিয়েছেন বিজেপি নেতারা। এ রকম যে কিছু ঘটতে চলেছে, সেই খবর তাঁদের কাছে ছিল না। জেলার এক বিজেপি নেতা স্বীকার করেন, “আগে থেকে কোনও প্রস্তুতি ছিল না আমাদের। দলের অবস্থান কী, তা-ও এখনও নেতৃত্বের তরফে স্পষ্ট করে বলা হয়নি। ফলে আমরা চুপ করেই আছি।” বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকারও বলেন, “রাজ্য স্তরে আমরা কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলবেন।”

আরএসএস নেতারা অবশ্য প্রকাশ্যেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তিন কৃষি আইন পিরিয়ে নেওয়ায় তাঁরা হতাশ। আকস্মিক এই ঘোষণায় কিছুটা চমকেও গিয়েছেন তাঁরা। কিসান সঙ্ঘের নদিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিলন খামারিয়ার আক্ষেপ, “তিনটি কৃষি আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা তা সমর্থন করেছিলাম। কয়েকটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল, এক বছর সময়ও দেওয়া হয়েছিল। সরকার হঠাৎ আইন প্রত্যাহার করায় আমরা হতাশ।”

এ দিন কালীগঞ্জে এক কর্মসূচিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই মোদী সরকার পিছু হটল কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন, “ভোটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা, “ভোট দেখে আইন হয়নি তাই ভোটের জন্য আইন প্রত্যাহারও হয়নি। সরকার চেষ্টা করেছিল আইন পরিবর্তন করার। যেহেতু টানা বিরোধিতা চলছিল, তাই সরকার এটা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

আরও পড়ুন
Advertisement