Explosion at Firecracker factory

বিস্ফোরণের স্মৃতি ফিরল, কারবার আপাতত ঝিমিয়ে

মঙ্গলবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল যেমন পড়ে ছিল, তেমনই প্রায় পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। ভাঙাচোরা বাঁশ, টালি, তক্তা ছড়িয়ে।

Advertisement
অমিতকুমার মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০৪
এখানেই হয়েছিল বাজি বিস্ফোরণ।

এখানেই হয়েছিল বাজি বিস্ফোরণ। নিজস্ব চিত্র।

দুটো মাসও পেরোয়নি। পাথরপ্রতিমার ঢোলাহাটে বাজি বিস্ফোরণের অভিঘাতে ফের যেন চমকে উঠল কল্যাণীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড।

Advertisement

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কল্যাণী পুরসভার এই ২০ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুল লেনে অবৈধ বাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গোটা এলাকা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার মহিলা কর্মীর। পরে হাসপাতালে মারকা যান আরও এক জন। কল্যাণী পুরসভা ও তার আশপাশের গ্রামাঞ্চল জুড়ে যে অবৈধ বাজি কারবারের রমরমা, ওই ঘটনায় তা ফের প্রকাশ্যে এসে যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল যেমন পড়ে ছিল, তেমনই প্রায় পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। ভাঙাচোরা বাঁশ, টালি, তক্তা ছড়িয়ে। পুলিশি ঘেরাটোপ কিছু নেই। কিন্তু এলাকার লোকজন এখন ওই ‘অভিশপ্ত জায়গা’ খানকিটা এড়িয়েই চলেন। ওই অবৈধ বাজি কারখানার মালিক সাধন বিশ্বাস ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বিস্ফোরণস্থলের কাছে তার বাড়ির ছাদেও মজুত করা প্রচুর বাজি পাওয়া গিয়েছিল। সেই বাড়ি এখন তালাবন্ধ। কাছে-পিঠে তার পরিবারের কোনও সদস্যেরও এই দিন দেখা মেলেনি।

অবৈধ বাজি কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে সাধনকে আগেও এক বার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু ক’দিন বাদেই সে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। জেল থেকে বেরিয়ে এসে সে আরও বড় করে কারবার ফেঁদেছিল। এ বার অবশ্য জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, বাজি তৈরি করার অনুমতি বা বৈধ কাগজপত্র কিছুই দেখাতে পারেনি সাধন। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৫ নম্বর ধারায় অপরাধমূলক নরহত্যা এবং বিস্ফোরক আইনের ‘নয় বি’ ধারায় অর্থাৎ অবৈধ ভাবে বিস্ফোরৈক পদার্থ মজুত রাখা, আমদানি ও রফতানির মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রথম ধারাটিতে যাবজ্জীবন ও দ্বিতীয়টিতে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন দাবি করেন, বর্তমানে ওই এলাকায় কোনও বাজি কারখানা চলছে না। বিস্ফোরণের পর পুলিশ ওই নানা এলাকায় ধরপাকড় চালায়, দু’চার জন ধরা পড়ে, বাকিরা আপাতত ভয়ে কারখানা বন্ধ রেখে বসে আছে। যারা ওই সব বাজি কারখানায় কাজ করতেন, তাঁরা অন্য কাজ করে দিন গুজরান করছেন। ওই এলাকা ছাড়াও শহিদপল্লি ও চর কাঁচরাপাড়ায় আগে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে যে সমস্ত বাড়িতে বাজি শুকোতে দেখা যেত, সেই সমস্ত জায়গাতেও এ দিন ‘চেনা দৃশ্য’ চোখে পড়েনি। যে সমস্ত দোকানে বাজি বিক্রি হত, সেগুলোও আপাতত ঝাঁপ বন্ধ রেখেছে।

কল্যাণীতে এই বাজি বিস্ফোরণের ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকার প্রশ্ন উঠেছিল। রানাঘাটের পুলিশ সুপারের দফতরের এক কিলোমিটারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কী ভাবে অবৈধ বাজি কারখানা অবাধে চলে এসেছে, সেই প্রশ্ন এড়ানো যায়নি। তার সদুত্তর না মিললেও নিজেদের মুখরক্ষা করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় এবং অবৈধ বাজি উদ্ধার করে। এ দিন রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার সিদ্ধার্থ ধোপলা বলেন, “যে সমস্ত জায়গায় অবৈধ বাজি তৈরি হত, নিষিদ্ধ বাজি মজুত রাখা হত অথবা বিক্রি হত, সর্বত্র নজরদারি রয়েছে। বিভিন্ন সময় অবৈধ বাজি ধরতে আচমকা অভিযানও চালানো হচ্ছে।”

Advertisement
আরও পড়ুন