মুর্শিদাবাদের প্রধান আকর্ষণ হাজারদুয়ারি। —ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগে সায় নেই সিপিএম জেলা কমিটির। কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব এ নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর আজ দেননি। বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে, তারা সব সময় মুর্শিদাবাদের জেলা ভাগকে সমর্থন করে এসেছে। ভবিষ্যতেও করবে। তৃণমূলও জানিয়েছে, জেলা ভাগের প্রস্তাবক তো তারাই।
২০২২ সালের ১ অগস্ট ৬ মাসের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগের ঘোষণা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে ঘোষণা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই জেলা ভাগের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে জঙ্গিপুরে।
কংগ্রেসের হাসানুজ্জামান বাপ্পা এই সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন। গণকনভেনশন, প্রতিটি ব্লকে সাইকেল র্যালির পরে মঙ্গলবার দিনভর গণ অবস্থানে বসছেন জঙ্গিপুরের সংগ্রাম কমিটির সদস্যেরা।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “জেলা ভাগ নিয়ে জেলা কংগ্রেসের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি। কাজেই জেলা ভাগে আমরা এখনও হ্যাঁ বা না আমাদের কোনও মতামতই জানাইনি। বাপ্পাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস থেকে সরানো বা বহিষ্কার করা হয়নি। তিনি কী করবেন, না করবেন তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করব না।’’
সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘দলের মধ্যে জেলার বিভাজন নিয়ে কখনও কোনও কথা ওঠেনি। আলোচনাও হয়নি সাংগঠনিক ভাবে। তবে আমাদের মতে, যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা বর্তমানে চলছে সেটাই বহাল থাকুক।”
তবে জেলা বিভাজনের পক্ষে বিজেপির সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, “জেলা ছোট হলে প্রশাসন ভাল ভাবে চালানো যায়। বিজেপি চায় লোকসভা ভিত্তিক নয়া জেলা। এটাই আমাদের ঘোষিত নীতি।”
তবে এর মধ্যে জেলা কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদকে ভেঙে পৃথক জেলা গড়ার দাবি থেকে সরে আসছেন না কংগ্রেসের হাসানুজ্জামান বাপ্পা। দু’সপ্তাহ আগে তাঁকে জেলা কংগ্রেস ব্লক সভাপতি ও মহকুমা সভাপতি পদ থেকে অবৈধ ভাবে সরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি বাপ্পার।
হাসানুজ্জামান শুক্রবার দাবি করেছেন, তিনি দলের যে পদে ছিলেন, এখনও সেই পদেই রয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের নির্দেশ মেনেই তিনি কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “অধীর চৌধুরীর নির্দেশে অবৈধ ভাবে আমাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। আমি এটাকে মানি না। কারণ এই মুহূর্তে জেলা কংগ্রেস বলে কিছু নেই।’’
তাঁর দাবি, ‘‘জেলা কংগ্রেস যেহেতু বহরমপুরকে কেন্দ্র করে তাই তারা চায় না জঙ্গিপুরকে কেন্দ্র করে নতুন জেলা গঠিত হোক। কিন্তু জঙ্গিপুর শিল্প, বাণিজ্য ও আর্থিক ভাবে অনেক এগিয়ে। বিড়ি শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দু’টি সিমেন্ট কারখানা, আন্তর্জাতিক মানের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়, এমডিআই, ফুড পার্ক, ফরাক্কা ব্যারাজের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে জঙ্গিপুরে। পৃথক জেলার জন্য আন্দোলন করাতেই আমার উপর এত উষ্মা। আমাকে অনেক বার সে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে। আমি সরে আসিনি। তাই আমাকে কোপে পড়তে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জেলা ভাগের আন্দোলন আমি কংগ্রেসের হয়ে করছি না, অরাজনৈতিক ভাবে লড়ছি। কারণ এখানকার মানুষ চান পৃথক জেলা। এক লক্ষ মানুষের সই সংগ্রহ শুরু করা চলছে। তা পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।’’