Duttapukur Blast

২ নাবালককে বাজির কাজে পাঠান? অভিযোগ শুনে আনন্দবাজার অনলাইনকে কী বললেন তৃণমূল নেতা

বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই তৃণমূল নেতার নাম আগেও জড়িয়েছে। বছরখানেক আগে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর হামলার ঘটনারও মূল সাক্ষী হন তিনি।

Advertisement
প্রণয় ঘোষ
সুতি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ১৭:৪১
দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থল। এখানেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদের দুই নাবালক বাজি কর্মীর।

দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থল। এখানেই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদের দুই নাবালক বাজি কর্মীর। ছবি: পিটিআই।

দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের ঘটনায় এ বার উঠে এল এক তৃণমূল নেতার নাম। অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ থেকে তিনি দুই নাবালককে বাজি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। রবিবার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ওই দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ওই দুই নাবালকের মা আনকরি বিবি অভিযোগ করেছেন, ‘‘স্থানীয় তৃণমূল নেতার কথাতেই বারাসতে ছেলেদের কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। ‘রাজমিস্ত্রির কাজ’ বলে ভুল বুঝিয়ে তিনিই ছেলেদের নিয়ে গিয়ে বাজি কারখানার কাজে লাগিয়ে দেন।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই তৃণমূল নেতা।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের ওই তৃণমূল নেতার নাম মোহন শেখ। রবিবার দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের পর থেকেই তিনি ‘নিখোঁজ’। বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই নাবালক-সহ মুর্শিদাবাদ থেকে আসা মোট ছ’জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এঁদের মধ্যেই দু’জন ছোটন শেখ এবং আমজাদ শেখের মা অভিযোগ করেছেন, ‘‘এলাকার ছেলেদের প্রলোভন দেখিয়ে বোমা বাঁধার কাজে লাগাত মোহন।’’ তাঁর দুই সন্তানও সেই ফাঁদে পড়েছিল। যদিও মোহন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন । আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, এই অভিযোগ আসলে তাঁকে ‘ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত’।

বিস্ফোরণের সঙ্গে মোহনের নাম জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বছরখানেক আগে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর যখন নিমতিতায় বোমা হামলা হয়, তখন সেই ঘটনার মূল সাক্ষী ছিলেন এই মোহন। পেশায় কসাই এই তৃণমূল নেতা আদালতে আগেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে মোহন বলেছেন, ‘‘জাকিরের উপর হামলার ঘটনায় তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার দিন এগিয়ে আসছে। তাই অভিযুক্তেরা আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’

কারা সেই চেষ্টা করছে, তা-ও জানিয়েছেন মোহন। তাঁর দাবি, জাকির-মামলায় মূল অভিযুক্ত যিনি, তাঁর নাম ঈশা খান। হিসাবমতো এই ঈশার বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেওয়ার কথা তাঁর। আর সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে যিনি এই অভিযোগ এনেছেন, সেই আনকরি বিবি আদতে ঈশা খানের ভ্রাতৃবধূ।

আনকরি বিবি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন মোহন জেলা থেকে ছেলেদের নিয়ে গিয়ে বোমা তৈরির কাজে লাগান। তাই ছেলেদের যেতে দিতে চাননি। কিন্তু মোহন বুঝিয়েছিলেন, বারাসতে রাজমিস্ত্রির কাজে লাগাবেন ছেলেদের। তাতেই রাজি হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু শীঘ্রই ‘ভুল’ বুঝতে পারেন আনকরি। কিন্তু তখন আর তা শোধরানো যায়নি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে চাইলে ভয় দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দু’জনকেই প্রাণে মেরে দেওয়া হবে।’’ ফলে চুপ করে যান তাঁরা। কিন্তু চুপ করে থেকেও শেষ পর্যন্ত ছেলেদের বাঁচাতে পারেননি তিনি। সোমবার আনকরি বলেছেন, ‘‘ওদের কাছে টাকাপয়সা ছিল না। এমনকি, ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে ওদের নজর এড়িয়ে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পারে। তাই চাইলেও ফিরে আসতে পারেনি।’’

এ প্রসঙ্গে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশ জানিয়েছেন, ‘‘উচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী দল তদন্ত করছে। যা যা প্রয়োজন হবে আমরা সাহায্য করব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement