প্রতীকী ছবি।
রোমহর্ষক পলায়ন, কিন্তু শেষমেশ পুলিশের হাতে পাকড়াও।
শনিবার সাতসকালেই জানাজানি হয়েছিল, নগেন্দ্রনগরে সরকারি হোম থেকে পালিয়েছে তিন নাবালিকা আবাসিক। পালাতে গিয়ে উঁচু থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছে এক জন। সারারাত অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকার পরে শনিবার সকালে কর্মীরা তাকে দেখতে পেয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
সকালে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই পলাতক কিশোরীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছিল পুলিশ। সারা দিন পার করে রাতে তাদের খোঁজ মেলে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে তাগের পাওয়া যায়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তিনটি মেয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে আছে বলে রাতে তাদের কাছে খবর আসে। তৎক্ষণাৎ সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তারা হোম থেকে পালানো তিন কিশোরী। তাদের কৃষ্ণনগর থানায় নিয়ে আসা হয়। আজ, রবিবার তাদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানো হবে। এই ঘটনায় হোমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরে নাবালিকাদের জন্য একটি সরকারি হোম আছে। সেখানে বাড়ি থেকে পালানো, নাবালিকা বিয়ে থেকে উদ্ধার হওয়া বা অবৈধ ভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশিদেরও রাখা হয়। হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ৩৭ জন আবাসিক ছিল। তার মধ্যে ওই চার জন অন্যদের থেকে খানিক বড়। তার মধ্যে এক জন বাংলাদেশি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। অবৈধ ভাবে ভারতে ঢোকার সময়ে সে ধরা পড়েছিল। বছর দেড়েক ওই হোমেই ছিল। আর তিন জন নদিয়ারই। তাদের নাবালিকা বিয়ের থেকে উদ্ধার করে এখানে রাখা হয়েছিল। ওই চার জন সব সময়ে এক সঙ্গে থাকত। তারা শুধু আবাধ্যই ছিল না, ছোট মেয়েদের সঙ্গে তারা গন্ডগোল করত। সেই কারণে তাদের তিনতলার একটি ঘরে আলাদা থাকতে দেওয়া হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চার জন দীর্ঘদিন ধরে পালানোর ছক কষছিল। শুক্রবার গভীর রাতে তারা তিনতলার ঘরের জানলার রড কেটে কাপড় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়। সেই কাপড় বেয়ে তারা নেমে আসে। নামার সময়ে কাপড় ছিঁড়ে এক জন পড়ে অচৈতন্য হয়ে যায়। তাকে ওই অবস্থায় ফেলেই বাকিরা পালায়, তার মধ্যে বাংলাদেশি কিশোরীটিও আছে। হোমের চারপাশে প্রায় আট ফুট উঁচু পাঁচিল। তার উপরে কাঁটাতার। তিন কিশোরী সেই পাঁচিল বেয়ে উঠে সেই কাঁটাতারের উপরে কাপড় জড়িয়ে টপকে বেরিয়ে যায়।
শনিবার সকালে কর্মীরা ঘুম থেকে উঠে দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে এক কিশোরী। আর উপরে তিনতলার জানালার সঙ্গে কাপড় বাঁধা। তখনই টনক নড়ে সকলের। খবর দেওয়া হয় পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। হোম কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এই ঘটনায় হোমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠছে, হোমে কি কোনও নৈশপ্রহরী ছিলেন না? যদি থেকে থাকেন, তা হলে তিনি কী করছিলেন? যদি নৈশপ্রহরী না থেকে থাকে, তা হলে কেন নাসবালিকাদের হোমে রাতে প্রহরা থাকবে না? মুখে কুলুপ এঁটেছে প্রশাসন। জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক অভিজিৎ দাশগুপ্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।