তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল পাঁচটি বাড়ি! গঙ্গার ভাঙনে মুর্শিদাবাদের গ্রামের পর গ্রামে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

সমশেরগঞ্জের ওই গ্রামগুলোর বেশির ভাগ মানুষের রুজিরোজগার বলতে বিড়ি তৈরি করা। অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। ওই মানুষগুলোর অনেকে এখন অসহায় ভাবে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সমশেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫২
HOUSE

সমশেরগঞ্জে ভেঙে পড়া একটি বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছ একের পর এক বাড়ি। কোথাও এক তলা বাড়ি তো কোথাও দোতলা পাকা বাড়ি, নদীগর্ভে মাথা গোঁজার ঠাঁই তলিয়ে যাওয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন গ্রামবাসীরা। হাহাকার ছাড়া করণীয় কিছু নেই। গঙ্গার ভাঙনে রাতের ঘুম উড়েছে মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের।

Advertisement

রবিবার সকালেই সমশেরগঞ্জে পর পর পাঁচটি বাড়ি ধসে যায়। চামেলী দাস নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘১৫দিন আগে শৌচাগার ধসে যায়। তার পর থেকেই আতঙ্কিত ছিলাম। আজ যা দেখলাম, তাতে ভয় বাড়ছে। যে কোনও মুহূর্তে আমাদের বাড়িটাও তলিয়ে যাবে নদীতে।’’ চামেলী যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁর প্রতিবেশী চন্দনা দাসের বাড়িতে ধস নামে। গঙ্গার ভাঙনে এ ভাবেই বাড়ি-জমি খুইয়ে ফেলছেন মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জের মহেশতলা, প্রতাপগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায়। আগে থেকেই নঘরা, কামালপুরের বাসিন্দারা ভুক্তভোগী হয়েছেন। এ বার ভাঙনের গ্রাসে গ্রামকে গ্রাম।

সমশেরগঞ্জের ওই গ্রামগুলোর বেশির ভাগ মানুষের রুজিরোজগার বলতে বিড়ি তৈরি করা। অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। দিন আনা দিন খাওয়া ওই মানুষগুলোর অনেকে এখন অসহায় ভাবে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কারও বাড়ির কর্তা এই মুহূর্তে কাজের সূত্রে ভিন্ রাজ্যে আছেন। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের স্ত্রীরা। মিনারুল শেখ নামে বাড়ি হারানো এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “আতঙ্কে ঘুমোতে পারি না রাতে। প্রশাসনের তরফ থেকে সাহায্যের নামে পেয়েছি কেবল ত্রিপল। সময় মতো বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বার করে এনেছিলাম। নইলে রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যে বউ-বাচ্চা নিয়ে নদীতে ভেসে যেতাম।’’ মিনারুলের মতোই ভীত গ্রামের অন্যান্যরা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে কেউ কেউ নিজের হাতেই ভাঙছেন বাড়ির একাংশ। অন্য দিকে, এ নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোলও অব্যাহত।

কিছু দিন আগেই ধস কবলিত এবং ধসপ্রবণ গ্রামগুলিতে পরিদর্শন করতে যান বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি এই ঘটনার দায় চাপান রাজ্য সরকারেরর উপর। বিরোধীদের অভিযোগ, ভাঙন থেকে গ্রামবাসীকে বাঁচাতে কার্যকরী পদক্ষেপ করছেন না প্রশাসন। প্রসঙ্গত, গত ৫ মে সমশেরগঞ্জের গ্রামগুলিতে ভাঙন মোকাবিলায় ১০০ কোটি টাকার অনুদানের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও ভাঙনরোধের কোনও কাজ শুরু হয়নি।’’

অন্য দিকে, এ নিয়ে সমসেরগঞ্জ ব্লকের বিডিও সুজিত লোধ বলেন, ভাঙন সংক্রান্ত বিষয়টি সেচ দফতর সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা সব সময় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement