Krishnanagar Case

কেরোসিন এনেছিল কে, স্টেটাস দেওয়ার পরে ঘটেছিল কী

মৃতার মায়ের অভিযোগ অনুযায়ী গণধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। যদিও ময়না তদন্তে ধর্ষণের নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি বলে খবর। এর পরে ওই হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস সামনে আসায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তরুণী কি আত্মহত্যা করেছেন?

Advertisement
সম্রাট চন্দ ও সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৬

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্লাস্টিকের বোতলে কেরোসিন কে এনেছিল? রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তরুণীর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী’ লেখা পোস্ট হওয়ার পরেই বা কী ঘটেছিল? কৃষ্ণনগরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় এই দু’টি প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে।

Advertisement

মৃতার মায়ের অভিযোগ অনুযায়ী গণধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। যদিও ময়না তদন্তে ধর্ষণের নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি বলে খবর। এর পরে ওই হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস সামনে আসায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তরুণী কি আত্মহত্যা করেছেন? মৃতার মা যদিও দাবি করেছেন, তাঁর মেয়েকে জোর করে মেসেজের কথাগুলি বলানো হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে দেহের ময়না তদন্ত করা চিকিৎসক সৌম্যজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু ব্যাপারে নিশ্চিত হতে এ দিন ঘটনাস্থল দেখে গিয়েছেন। রাত পর্যন্ত ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশ পায়নি।

গত বুধবার সকালে ফাঁকা দুর্গামণ্ডপের নীচে, যেখানে তরুণীর অর্ধদগ্ধ দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল, সেটাই যে ঘটনাস্থল, সেই বিষয়ে পুলিশ থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ— সবাই প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু দেহের কাছে পড়ে থাকা কেরোসিনের বোতল কে এনেছিল? যদি ধরা হয় যে তরুণী নিজেই গায়ে আগুন দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, অত রাতে তিনি কেরোসিন পেলেন কোথায়? রেশন দোকান বাদে এখন খুব কম দোকানই কেরোসিন রাখে। অথবা, ধরে নিতে হয় যে তিনি ব্যাগে কেরোসিন নিয়ে এসেছিলেন। তা হলে তিনি কি আগেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? কিন্তু ধৃত যুবক যে ফোনালাপে-ঝগড়ার কথা জেরায় কবুল করেছেন, তা হয়েছিল মঙ্গলবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ। তরুণী তা হলে আগেই কেরোসিন জোগাড় করে রাখবেন কেন?

ধর্ষণ-খুনের মামলায় ধৃত বছর একুশের যুবকের দাবি, ওই রাতে ১০টা নাগাদ বেরিয়ে তিনি কলেজ মাঠে (ঘটনাস্থলের খুব কাছে) আড্ডা দিতে যান, ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরেও আসেন। তাঁর পরিবার সূত্রেও তা-ই দাবি করা হয়েছে। কিন্তু জেএনএম হাসপাতাল ও পুলিশের একাধিক সূত্রের দাবি, জীবন্ত অবস্থায় তরুণীর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি সম্ভবত রাত ১২টার পরে ঘটে। তা হলে, সেই সময়ে তাঁর গায়ে আগুন দিল কে? গায়ে আগুন লাগার পরেও তিনি আর্তনাদ বা ছোটাছুটি করেননি কেন, তার সম্ভাব্য একটি ব্যাখ্যা মিলেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গায়ে আগুন লাগা মাত্র কেউ কেউ সংজ্ঞাহীন হয়ে যান। এ ক্ষেত্রেও তা হয়ে থাকতে পারে।

পুলিশ সূত্রের দাবি: ধৃত ‘প্রেমিক’ জেরায় জানিয়েছেন, মাস পাঁচেক আগে সমাজমাধ্যমে আর এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তিনি মৃত তরুণীর স্কুলেরই ছাত্রী ছিলেন, পাঁচ বছরের বড়। তাঁর সঙ্গে যুবকের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল। কৃষ্ণনগরে বিসর্জনের কার্নিভালে দুই তরুণীর পরিচয় করিয়ে দেন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় তরুণীকে নিয়েই রানাঘাটে সিনেমা দেখতে যান। এই নিয়েই মঙ্গলবার রাতে ফোনে অশান্তি হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তরুণীর ওই হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস চোখে পড়ে তাঁদের এক বান্ধবীর। তিনি বার কয়েক ফোন করলেও তরুণী তা ধরেননি। তখন তিনি যুবকটিকে ফোন করে জানান। যুবকটি নাকি বলেন, “ছাড় তো! ও মাঝে-মধ্যেই এ রকম করে। কাল সকালেই ঠিক হয়ে যাবে।”

এ দিন নদিয়ার সব বিজেপি বিধায়ক ও কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায়কে নিয়ে তরুণীর বাড়িতে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’-র প্রতিনিধিরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে শুভেন্দুর দাবি, ছাত্রীটিকে নির্যাতন করে মেরে আর জি কর কাণ্ডের মতো তড়িঘড়ি মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। যদিও সে দিন মৃতার পরিবারের আইনজীবী ময়না তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ জানাননি। শুভেন্দু দাবি করেন, “কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার আইসি অমলেন্দু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে। কাঁথি থানায় থাকাকালীন মিথ্যা মামলা দেওয়ার তদন্ত। এক দিন শুনবেন, সিবিআইয়ের হাতে উনি গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। এখানকার যিনি পুলিশ সুপার, তিনি যখন যেখানেই যান, অমলেন্দু বিশ্বাসকে ট্যাঁকে গুঁজে নিয়ে যান।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “আমাদের কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে না। কথাগুলো যিনি বলেছেন, তাঁর এক ভাই কাঁথির পুরপ্রধান থাকার সময় এমন কিছু কাজ করেছিলেন, যা নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে। আমাদের আইসি-কে তাতে সাক্ষ্য দিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল।”

Advertisement
আরও পড়ুন