মাসির বাড়িতে ছাপ্পান্ন ভোগ দেওয়া হচ্ছে দধিবামনদেবকে। ছবি: মৃন্ময় সরকার।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা প্রথায় ছেদ পড়েছিল গত বছরই। গত বছরের মত এবছরও রথযাত্রা উপলক্ষে মন্দিরের বিশেষ পুজোপাঠ ছাড়া রথ নিয়ে পরিক্রমা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। সৌজন্যে করোনা। করোনা মহামারি আবহে গত বছরও নিষিদ্ধ হয়েছিল রথযাত্রা এবছরও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে বন্ধ রথযাত্রা। গত সপ্তাহের সোমবার ছিল সোজারথ কিন্তু ওই দিন হয়নি রথযাত্রা কেবল মন্দিরে বিশেষ পুজোপাঠেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বলরাম, শুভদ্রা ও জগন্নাথদেবকে। সোজা রথের মতো উল্টোরথেও গড়বে না চাকা। এমনকি নিষিদ্ধ রয়েছে জমায়েতও। লালবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের অফিস সূত্রে খবর, উল্টোরথ উপলক্ষে সোজারথের মতোই একই নিয়ম থাকছে। বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়ছে পুলিশি তরফে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, লালগোলার রাজবাড়ির রথযাত্রা প্রায় দু'শো বছর পুরনো। লালগোলার রাজপরিবারের কুলদেবতা দধিবামনদেবকে রথের দিন জগন্নাথ রূপে পুজো করা হয় তারপর রথে করে লালগোলা রথবাজারের মাসির বাড়িতে আনা হয়। সেখানে সাত দিন ধরে চলে পুজোপাঠ তারপর উল্টো রথের দিন রথে করে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। রথ উপলক্ষে দধিবামনদেব মন্দির চত্বরে বড় মেলাও বসে। কিন্তু গত বছর থেকে মহামারি পরিস্থিতিতে বন্ধ রথযাত্রা। রাজপরিবারের সদস্যের কোলে করেই মাসির বাড়ি আসতে হয়েছে দধিবামনদেবকে।
রথবাজারের মাসির বাড়িতে দেওয়া হয়েছে ৫৬ ভোগ৷ বিশেষ ওই পুজোতে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ ভিড় জমান কিন্তু এই বছর মহামারি পরিস্থিতিতে অল্প লোকজন নিয়েই হয়েছে ৫৬ ভোগের পুজো। উল্টো রথের দিন সকালে বিশেষ পুজোর পর হবে যজ্ঞ তারপরই দধিবামনদেবকে রাজ পরিবারের সদস্য কোলে করে নিয়েই ফের দধিবামনদেবের মন্দিরে ফিরবেন। এদিন রাজ পরিবারের সদস্য সৌরভ রায় বলেন, ‘‘সকালের দিকেই পুজো ও যজ্ঞের পর রাজ পুরোহিত আমার কোলে তুলে দেবেন। আমি কোলে করে দধিবামন দেবকে নিয়ে মন্দিরে ফিরব। গত বছরের মত এবছরও ৫৬ ভোগের অনুষ্ঠানও অল্প লোকজন নিয়েই করা হয়েছে।"
উল্টোরথের দিন বিগ্রহকে রথের ওপর বসিয়ে বিশেষ পুজোপাঠ হবে কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন রথযাত্রা নশিপুর আখড়ার রথযাত্রায়। নশিপুর আখড়া সূত্রে এমনটাই খবর জানাগিয়েছে।
সারাদিন বিশেষ পুজো পাঠের পর পিতলের দুটি রথ, চাঁদির রথ, কাঠের রথে বসানো হবে বিগ্রহ দের তারপর বিকেলে রথের উপরই বিশেষ পুজোপাঠের পর সন্ধ্যায় নামিয়ে আনা হবে মন্দিরে।
উল্টোরথ উপলক্ষে মেলা নিষিদ্ধ করেছে জিয়াগঞ্জের কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন সাধকবাগ আখড়ার রথযাত্রা কমিটি, বলেই খবর আখড়া সূত্রে।
এদিন লালবাগের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিক্রম প্রসাদ বলেন, ‘‘সোজা রথেও যে নিয়ম ছিল উল্টো রথেও একই থাকছে। কোনও শোভাযাত্রা করা যাবে না। বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’