প্রতীকী ছবি।
সরকারি প্রকল্পের ঘর নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, হয়েছে স্বজনপোষণ। নিজেরই দলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে এমনই সব অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসককে চিঠি লিখলেন তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি। আর যাতে এ সব না হতে পারে তার জন্য মহকুমাশাসককে সতর্কও করেছেন তিনি। তাঁর এই চিঠির বক্তব্যকে সমর্থন করছেন বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারও। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শান্তিপুর শহরে দলের ভিতরে-বাইরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সব ঠিকঠাক চললে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নির্বাচন আসন্ন। তার আগে শান্তিপুরে দলের প্রাক্তন কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে শহর কমিটির সভাপতির অভিযোগ আনার ঘটনায় অনেকেই রাজনৈতিক কারণ দেখতে পাচ্ছেন। অরবিন্দ অবশ্য দাবি করছেন, সরকারি ঘর বণ্টন প্রক্রিয়ায় এ বার যাতে কোনও দুর্নীতি হতে না পারে, গোটা প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে চলে, তার জন্যই তিনি এই পদক্ষেপ করেছেন। তবে তাঁর বিরোধী পক্ষের দাবি, অজয় দে মারা যাওয়ায় শান্তিপুরে তৃণমূলের ভিতরে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে অরবিন্দেরা। প্রাক্তন কাউন্সিলরদের বেশির ভাগই অজয়-অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিসেন, সেখানে অরবিন্দ বরাবরই অজয়-বিরোধী বলে পরিচিত।
সরকারি আবাস প্রকল্পে শান্তিপুর পুর এলাকায় দরিদ্র পরিবারগুলিকে ঘর করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পরই সক্রিয় হয়েছেন অরবিন্দেরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রাক্তন কাউন্সিলরদের মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে তালিকা। এবং তা নিয়েই আপত্তি তুলেছেন অরবিন্দেরা। তাঁদের দাবি, প্রাক্তন কাউন্সিলরদের বদলে পুরসভার কর্মীরাই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরি করুন। বুধবার অরবিন্দ বলেন, “পুরসভার মেয়াদ অনেক দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তা হলে কেন প্রাক্তন কাউন্সিলরেরা উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করবেন? সেই অধিকার কেন তাঁদের দেওয়া হবে।”
তৃণমূলের একাংশের দাবি, অজয় না থাকায় প্রাক্তন কাউন্সিলরেরা কার্যত ‘অভিভাবকহীন’। পুরভোটের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁদের চাপে ফেলতে চাইছেন অরবিন্দেরা। লক্ষ্য, প্রাক্তন কাউন্সিলরেরা যাতে আগামী পুরভোটে টিকিট না পান। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বৃন্দাবন প্রামাণিকের দাবি, “শান্তিপুরে সরকারি ঘর নিয়ে কোনও দিন অনিয়ম হয়নি। যিনি এটা বলছেন, তিনি আসলে বিরোধীদের সাহায্য করার জন্য দলকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং আমাদের শহর সভাপতি একই সুরে কথা বলছেন। এতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে ওই চিঠির আসল উদ্দেশ্য কী।”
হাতে গোনা যে কয়েক জন কাউন্সিলর অজয়-বিরোধী ছিলেন, তাঁদের অন্যতম ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর সুব্রত ঘোষও কিন্তু অরবিন্দদের মত সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন না। তাঁর মতে, “অতীতে সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল। আমিও চাই, এ বার পুরো স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি ঘর বণ্টন হোক।” অজয় অনুগামী অধিকাংশ কাউন্সিলরের মতে, তাঁরা তালিকা করলে অরবিন্দদের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সেটাই তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।
অরবিন্দের প্রতিক্রিয়া, “কে কী বলছেন, জানি না। অতীতে কয়েক জন কাউন্সিলর সরকারি প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছিলেন। আমরা সেটা হতে দেব না। দলের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হতে দেব না।” আর শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেও যিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, রানাঘাটের সেই বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের মতে, “শান্তিপুরের প্রাক্তন কাউন্সিলরেরা ঘর দেওয়ার নাম করে বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বসে আছেন। আগেও এই ঘটনা ঘটেছে। অরবিন্দবাবুর চিঠি কার্যত সেটাকেই সামনে এনেছে।”
গত বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার কারণে অজয় দে পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তাঁর জায়গায় পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসার তাপসকুমার বিশ্বাসকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও চার জন প্রশাসক। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের একটি তালিকা আছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ঘর দেওয়া হয়। এ বারও সেই তালিকা প্রশাসকদের দেওয়া হয়েছে। কাদের ঘর দেওয়া হবে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব প্রশাসকদের। সবটা তাঁরাই ঠিক করছেন।” রানাঘাট মহকুমাশাসক রানা কর্মকার বলেন, “পুর কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি আবেদন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।”