রাতারাতি বাড়ল মিষ্টির দাম। পাঁচ টাকা দামের মিষ্টি দোকান থেকে কার্যত হারিয়ে যাওয়ার মুখে। মিষ্টির ন্যূনতম দাম ৬ টাকা হয়েছে। তবে ওই দামের মিষ্টি আর যাই হোক অতিথিকে দেওয়া যাবে না এমনই তার আকার। ফলে ৭ বা ৮ টাকার দামের মিষ্টি ছাড়া আগামী দিনে মুখরক্ষা হবে না বলে জানাচ্ছেন খোদ দোকানদারেরাই। একই সঙ্গে ১০ টাকার মিষ্টি বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা। জেলার অনেকে দোকানদার অবশ্য ক্রেতাদের অভ্যাস বুঝে দাম না-বাড়িয়ে একটু ‘চাপিয়ে’ দিচ্ছেন মিষ্টির আকার।
সব মিলিয়ে দশমীর এই মিষ্টি মরশুমে অভ্যাগতের পাত থেকে ক্রমে উধাও হচ্ছে রসগোল্লা সন্দেশের মতো চিরকালিন মিষ্টি কিংবা অধরের সরপুরিয়া, নবদ্বীপের লালদই, শান্তিপুরের নিঁখুতি, রানাঘাটের পান্তুয়া।
কিন্তু কেন?
জবাবে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর মুখে আচমকাই বেড়ে গিয়েছে দুধের দাম। পুজোর আগে যে দুধের দাম ছিল ৪০ - ৪৫ টাকা। সেই দুধ ৬০ -৬৫ টাকা সের দরে কিনতে হয়েছে। ওই দরে দুধ কিনে মিষ্টি তৈরি করতে হলে দাম না বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকছে না।
নবদ্বীপের এক মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী লালু মোদক বলেন, “দুধের দাম বেড়ে যাওয়া আমরা সরাসরি কৃষ্ণনগর থেকে ছানা কিনে আনছি। সেখানেও দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। ১৩০- ১৪০ টাকার ছানা বেড়ে হয়েছে ২৬০ টাকা।” ফলে মিষ্টির দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে আকার। পাশাপাশি উৎপাদকেরা কমিয়ে দিয়েছেন মিষ্টি তৈরির পরিমাণও। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী উৎপল ঘোষ বলেন, “অন্যান্য বারের তুলনায় ৩০ শতাংশ মিষ্টি এ বার কম করেছি। কেন না পুজোর কটা দিনের অভিজ্ঞতা বলছে এবারের দশমী বা তারপরের মিষ্টির বাজার মন্দা হবে।”
কৃষ্ণনগরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সহ-সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “করোনা কালে গোখাদ্যের যোগানে ঘাটতি এবং সে জন্য অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গো পালন এখন আর লাভজনক নয়। ফলে গ্রামীণ গৃহস্থেরা গরু রাখতে চাইছেন না। বাজারে দুধের যোগান কমে যাচ্ছে।”
অন্য দিকে পুজোর মরশুমে দুধের চাহিদা প্রচুর বেড়ে যায়। যে কোনও দামেই মিষ্টির দোকানদার পরিমাণ মতো দুধ কিনতে চান। এতেই হু হু করে চড়ে যাচ্ছে দুধের দাম। নবদ্বীপের লালু মোদক বলেন, “সমানে একের পর এক উৎসব আছে। ফলে চাহিদা লেগেই থাকবে। সরবরাহ বাড়ানোর উপায় হাতে নেই। সুতরাং দুধের দাম এখনই কমবে বলে মনে হয় না।”
মিষ্টির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জৌলুশ হারাচ্ছে দশমীর প্লেট। মিষ্টির জায়গা দ্রুত ভরাট করছে নোনতা বা কেক পেস্ট্রি জাতীয় খাবার। দাম চড়ছে সরপুরিয়া সরভাজা থেকে লালদই। আর দাম না বাড়িয়ে আকার ছোট হয়ে গিয়েছে রানাঘাটের পান্তুয়ার।