হুমায়ূন কবীর। ফাইল চিত্র।
ফের রাজনৈতিক বিতর্কে হুমায়ূন কবীর। যার জেরে তোলপাড় জেলা তৃণমূলের অন্দর মহল। মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সভাপতি বদল হচ্ছে, বদলাচ্ছে যুব কমিটি সহ সমস্ত কমিটি, এই মর্মে তার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিয়ো যে তাঁরই কার্যত তা স্বীকার করে এদিন “দলের অন্দরের বৈঠকের কথা কী ভাবে বাইরে ফাঁস হল” সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হুমায়ুন। তৃণমূলের জেলা নেতারাও হুমায়ুনের এইসব বক্তব্যে রীতিমতো বিরক্ত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, “জেলায় তৃণমূলের সব সভাপতি বদল হচ্ছে এমন কোনও খবর আমার কাছে নেই। যিনি বলেছেন তিনিই বলতে পারবেন।”
বিধায়ক হুমায়ুন কবীর অবশ্য বরাবরই বিতর্কে থাকতে ভালবাসেন। এর আগেও তাঁর বহু বক্তব্য বিতর্ক ছড়িয়েছে জেলায়। শুধু তাই নয়, জেলা রাজনীতিতে দল বদলের ক্ষেত্রেও নজির গড়েছেন তিনি। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, পরে ফের কংগ্রেসে ফিরে যান। সেখান থেকে যান বিজেপিতে। বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটে লড়ে হেরে গিয়ে যোগ দেন ফের তৃণমূলে।
ভরতপুর বিধানসভায় এবারে দলের টিকিট পেলেও তাকে নিয়ে তৃণমূলে কোন্দলও কম হয়নি। পরে অবশ্য তিনিই জিতে বিধায়ক হয়েছেন। ভরতপুরে রবিবার তাঁর নিজস্ব বিধায়ক অফিসের উদ্বোধনে গিয়ে তিনি জেলা জুড়ে তৃণমূলে রদবদলের কথা জানিয়ে দেন দলের কর্মীদের। ভিডিয়োতে সে কথা ধরে রাখেন দলেরই কর্মীরা। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ভিডিয়ো। তাতে হুমায়ুন বলেন, “২১ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্য জুড়ে ২৩টি জেলাতেই তৃণমূলের সংগঠন নতুন ভাবে সাজানো হবে। ভরতপুরের ৭ টি অঞ্চলেই সভাপতি, যুব সভাপতি, মহিলা সমিতির সভাপতি সহ শাখা সংগঠনগুলিকেও ঢেলে সাজানো হবে।”
হুমায়ুনের কথায়, “যতটুকু জানতে পেরেছি, মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি পরিবর্তন হবে। যুব সভাপতি পরিবর্তন হবে। অন্যান্য শাখা সংগঠনেরও সভাপতি বদল হবে। বদল হবে শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি থেকে মহিলা সংগঠন, কিষান খেতমজুর সংগঠনের সভাপতিও। আমরা সেখানে খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় থাকব।”
“এক পদ এক নেতা” এই গেরোয় এ জেলায় শুধুমাত্র মন্ত্রী সুব্রত সাহার দলীয় চেয়ারম্যান পদ বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু “জেলা কমিটি থেকে সব শাখা সংগঠনের সভাপতি বদল হচ্ছে” হুমায়ুনের এই ঘোষণায় তৃণমূলের অনেক নেতারই পদ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমায়ুন কোথা থেকে জেলা সভাপতিদের পরিবর্তনের এই খবর পেলেন তা অবশ্য বলেননি। এদিন অবশ্য তৃণমূলের জেলা সভাপতি সহ সমস্ত শাখা সংগঠনের সভাপতি পরিবর্তনের কথা বলা যে তার ভুল হয়েছে তা স্বীকার করেন হুমায়ুন। হুমায়ুন বলেন, “আমি দলীয় কর্মীদের উৎসাহিত করতে গিয়ে ওই কথা মুখ ফসকে বেড়িয়ে গিয়েছে। ওই কথা বলার আমার এক্তিয়ার নেই। কারণ সেটা জেলার বিষয়। আমি আমার কেন্দ্রের দলীয় সংগঠনের কথা বলতে চেয়েছি।”
আবার তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “এ বারে জেলায় এ পর্যন্ত ২০ টির মধ্যে ১৮ টি আসনে তৃণমূল জিতেছে। এত সাফল্যের পরে এই জেলার সভাপতি বদল হবে বলে মনে হয় না। তবে মুর্শিদাবাদকে দুটি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে দুই অংশ থেকে দুজন সভাপতি রেখে জোড়া কমিটি গঠন করা হতে পারে। এক নেতা এক পদ শুধুমাত্র মন্ত্রী, সভাধিপতি, সহ সভাধিপতির মত প্রশাসনিক পদগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, বিধায়ক ও সাংসদরা জোড়া পদে থাকতে পারবেন।” তৃণমূলের অন্দরের খবর, এবারে দলের সংগঠনে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে খলিলুর রহমান ও জাকির হোসেনকে।