Crime Against Woman

হস্টেল থেকে হাসপাতালে আঁধার পথই ভরসা পড়ুয়াদের

বুধবার সন্ধ্যা। ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁয়েছে। কল্যাণী শিল্পাঞ্চল রেলস্টেশনকে ডানদিকে রেখে বাঁদিকে পুরনো হাসপাতাল মর্গের রাস্তা ধরতেই দেখা গেল ঘুটঘুটে অন্ধকার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী  শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৩
হাসপাতালের পথে অন্ধকারে গাড়ির আলোই ভরসা। বুধবার রাতে।

হাসপাতালের পথে অন্ধকারে গাড়ির আলোই ভরসা। বুধবার রাতে। ছবি: সুদেব দাস

কল্যাণী শিল্পাঞ্চল রেল স্টেশনের যাওয়ার মূল রাস্তা থেকে এক ফালি গলিপথ নেমে গিয়েছে বাঁ দিকে। ওই পথেই সহজে যাওয়া যায় কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পিছনের দিকে। কয়েক পা এগোলেই ডানদিকে হাসপাতালের পুরনো মর্গ। সেটি এখন পরিত্যক্ত। তারপরই প্রাচীরে ঘেরা চিকিৎসক পড়ুয়াদের আবাসন এলাকা। আরও কিছুটা এগোলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথ। সূর্য ডুবলেই গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যায় এই পথ।

Advertisement

আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলন অব্যাহত। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সামিল হয়েছেন বিচারের দাবিতে। ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বারবার প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে। তবে এতকিছুর পরেও কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়াদের ওই আবাসনে যাওয়ার পথে আলোর কোনও ব্যবস্থা নেই। আলো জ্বলবে কবে? সেই প্রশ্নের উত্তরেরই এখন খোঁজ চলছে।

বুধবার সন্ধ্যা। ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁয়েছে। কল্যাণী শিল্পাঞ্চল রেলস্টেশনকে ডানদিকে রেখে বাঁদিকে পুরনো হাসপাতাল মর্গের রাস্তা ধরতেই দেখা গেল ঘুটঘুটে অন্ধকার। দু'হাত দূরে কী রয়েছে মোবাইলের আলো বন্ধ করলে গোঝে কার সাধ্যি। রাস্তার দু’পাশে অবশ্য একাধিক পথ বাতির স্তম্ভ রয়েছে। তবে তাতে শেষ কবে আলো জ্বলতে দেখা গিয়েছে তা অনেকেই মনে করতে পারলেন না। বর্ষায় আগাছায় ঢেকেছে সেই সব বাতিস্তম্ভ। কিছু সময় পরপর দু-একটি মোটর বাইক বা স্কুটারের যাতায়াতের আলোতেই কাটে অন্ধকার। আর মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে পুরনো ওই মর্গের দেওয়ালে লাগানো আলো জ্বলতে-নিভতে দেখা যায়।কিছুটা পথ এগোলেই ডানদিকে চিকিৎসক পড়ুয়াদের হস্টেলের দরজা। ষাটোত্তীর্ণ নিরাপত্তারক্ষী সেখানে একাই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানালেন, ‘‘আমি বেশি কিছু বলতে পারব না। উপর থেকে যেমন নির্দেশ আসে, সেইমত কাজ করি।"

জানা গিয়েছে, জরুরি ফোন এলে গভীর রাতেও আবাসন থেকে চিকিৎসক পড়ুয়াদের ছুটে যেতে হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে অন্যান্য ওয়ার্ডে। চিকিৎসক পড়ুয়া এক তরুণীর কথায়, "হস্টেলের গেট থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তবে বেশি রাত হয়ে গেলে কখনও জোরে হেঁটে, কখনও দৌড়ে যাতায়াত করি। কারণ অন্ধকারে ফাঁকা রাস্তায় নিরাপত্তার অভাব তো আছেই।"

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় হাসপাতালের মর্গে যাতায়াতের জন্য ওই পথ ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন নতুন মর্গ অন্যত্র সরে যাওয়ায়, পরিত্যক্ত মর্গের দিকে আর নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে ওই রাস্তায় রাতে আলোও জ্বলে কি না সেদিকেই কারও নজর নেই। আর আলো না থাকায় রাত বাড়লেই তা হয়ে দাঁড়ায অসামাজিক কার্যকলাপের বিচরণ ক্ষেত্র।

চিকিৎসক পড়ুয়া সংগঠনের নেতা আলিম বিশ্বাস বলেন, "সমস্যার কথা আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শুধু পথবাতি নয়। ওই রাস্তার সংস্কার হবে বলেও শুনেছি।" হাসপাতালের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, "আবাসনের প্রবেশপথে আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। একটা অংশে অন্ধকার রয়েছে। সেখানে দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।"

আরও পড়ুন
Advertisement