তোলা হচ্ছে অপরিণত পেঁয়াজ। হরিহরপাড়ায়। ছবি: মফিদুল ইসলাম।
দাম পেতে আগাম চাষ করা অপরিণত পেঁয়াজ খেত থেকে তুলে বিক্রি করছেন চাষিদের একাংশ।
বহরমপুরের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি মফস্সলের একাধিক হাটে-বাজারে মিলছে নতুন পেঁয়াজ। পাশাপাশি মিলছে নাসিক থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজও। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে খুচরো ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে।
সাধারণ চাষি থেকে উদ্যানপালন দফতরের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, শীতকালীন পেঁয়াজ সাধারণত উঠতে শুরু করে জানুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে। পেঁয়াজ তোলার কাজ চলে মার্চ-এপ্রিল মাস জুড়ে। তবে সেই সময় পেঁয়াজের দাম থাকে তলানিতে। পেঁয়াজ সংরক্ষণের বন্দোবস্ত না থাকায় সেই সময় খেত থেকে তোলার পরই কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা। চাষিদের দাবি, সেই সময় তাঁরা পেঁয়াজের দাম পান বড় জোর পাঁচ থেকে ছ’ টাকা। কখনও উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে দু’-এক টাকা দাম কমবেশি হয়।
ফলে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ, শীতকালীন আগাম পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিয়ে থাকে কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ, আগাম চাষে উৎসাহ দেখিয়েছেন চাষিদের একাংশ।
মাস দুয়েক আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। নাসিকের পেঁয়াজ পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হতেই মাসখানেক ধরে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে বড় জোর ২৫ টাকা কেজি। ফলে বাড়তি লাভের আশায় অনেক চাষি আগাম চাষ করা অপরিণত পেঁয়াজ খেত থেকে তুলে বিক্রি করছেন। চাষিরা সেই পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন ১২-১৪ টাকা কেজি। হরিহরপাড়া, নওদার বিভিন্ন এলাকায় আগাম পেঁয়াজ তোলার হিড়িক পড়েছে। হরিহরপাড়ার এক পেঁয়াজের কারবারি প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে এটা ঠিক। তবে মাস খানেক পরেই পেঁয়াজ ওঠার মুখে পেঁয়াজের দাম তলানিতে ঠেকবে। বাজারে পেঁয়াজের চাহিদাও ভাল আছে। কিছুটা লাভের আশায় চাষিরাও অপরিণত পেঁয়াজ বিক্রি করতে শুরু করেছেন।” হরিহরপাড়ার ডুবোপাড়ার চাষি মধু মণ্ডল বলেন, “খেত থেকে পেঁয়াজ ওঠার মরসুমে পেঁয়াজের দাম কম থাকে। সেই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষের খরচটুকুই ওঠেনা৷ এই সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি আছে । তাই কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় পরিণত হওয়ার আগেই খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছি। দামও তুলনামূলক ভাবে বেশি পাচ্ছি।”
একই কথা বলছেন নওদার চাষি আব্দুল আলিম, নৃপেন মণ্ডলরা। জেলা উপ উদ্যানপালন অধিকর্তা প্রভাস মণ্ডল বলেন, “এ বছর পেঁয়াজের ভাল ফলন আশা করা হচ্ছে। চাষিরা সংরক্ষণের স্থায়ী সুযোগ না থাকায় অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন, এটা ঠিক। ফলে বাড়তি লাভের আশায় অনেক চাষিই আগাম চাষ করা অপরিণত পেঁয়াজ খেত থেকে তুলে বিক্রি করছেন। তবে সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কাঠামো তৈরি করলেও সেখানে কমপক্ষে ছ’ মাস চাষিরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।”