Durga Puja 2022

বৈষ্ণব-শাক্তের মিলনক্ষেত্রে দুর্গাপুজো, শান্তিপুরের বড় মৈত্রবাড়ির পুজো যেন চলমান ইতিহাস

এই বাড়িতেই এক সময় বাইরে থেকে বাইজিরা আসতেন, রাতভর গানবাজনার আসর বসত। সেই সময় তাঁদের মাথা পিছু দেওয়া হত নগদ এক হাজার টাকা এবং একটি করে হিরের আংটি। বর্তমানে সেই ঘরের ভগ্নদশা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১৭:০৬
শান্তিপুরের বড় মৈত্রবাড়ির পুজো।

শান্তিপুরের বড় মৈত্রবাড়ির পুজো। নিজস্ব চিত্র।

চৈতন্যের পদধূলিধন্য শান্তিপুরে বৈষ্ণব ও শাক্তের মিলনক্ষেত্র হিসাবে বড় মৈত্র বাড়ির দুর্গাপুজো অন্যতম। চৈতন্য পার্ষদ অদ্যৈতাচার্য্য, নাটোরের রাজগুরু এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি, বাংলার সংস্কৃতির এই তিন পীঠস্থানকে স্পর্শ করে রয়েছে শান্তিপুরের বড় মৈত্র বাড়ির প্রায় ২৩০-২৩৫ বছরের দুর্গাপুজো। এক সময় বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজো শুরু হত।

এই বাড়িতেই এক সময় বাইরে থেকে বাইজিরা আসতেন, রাতভর গানবাজনা, খানাপিনার আসর বসত। তৎকালীন আমলে তাদের মাথা পিছু দেওয়া হত নগদ এক হাজার টাকা এবং একটি করে হিরের আংটি। বর্তমানে সেই ঘরের ভগ্নদশা। এক সময়ে পালকি করে কলাবউকে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়ার রীতি ছিল। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই বাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় দশ দিন ধরে, পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরে প্রতিপদ থেকে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই বড় মৈত্র বাড়ির দুর্গামূর্তি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দুর্গামূর্তির অনুকরণে তৈরি। এই বাড়ির দুর্গাপুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে এবং এখানে দেবীরূপে পূজিত বৈষ্ণবী। সেই কারণে বলি প্রথা নেই।

Advertisement

অদ্বৈতাচার্যের বংশধর রাধামোহন গোস্বামী ভট্টাচার্য্য ছিলেন নাটোরের রাজগুরু। তাঁর কন্যা রামমণির বিয়ে হয় ফরিদপুরের রামরতন মৈত্রের সঙ্গে। বিয়ের পর বাবার কাছে আবদার করে গোপাল বিগ্রহ বাড়িতে আনেন রামমণি এবং স্থির করেন বাড়িতে গোপালের মন্দির স্থাপন করবেন। এর পর থেকেই এই বাড়িতে শুরু হল গোপালের নিত্য সেবা এবং জন্মাষ্টমী, দোল ও নন্দোৎসবের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পরবর্তী কালে রামমণি স্বপ্নে দশভুজার দর্শন পান এবং তার পর মনস্থির করেন তিনি দুর্গাপুজো করবেন। সেই শুরু বাড়ির পুজো।

বড় মৈত্রী বাড়ির মায়ের রূপ একটু ভিন্ন। এখানে দেবীর সন্তানরা থাকেন না। প্রতিমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এখানে দেবীর সিংহ অশ্বমুখী, সাধারণ ভাবে একে নলসিংহ বলা হয়। মাতৃমূর্তি সোনা ও রূপো দিয়ে সাজানো। যদিও মাতৃ-অঙ্গে ডাকের সাজ নজরকাড়া।

এই বাড়িতে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিন মাতৃমূর্তির উদ্দেশে ভোগ নিবেদন করা হয়। যদিও মহাষ্টমীর দিন অন্নভোগ, পোলাও, খিচুড়ি, পরমান্ন, নানা রকম ভাজা, তরিতরকারি, চাটনি, মিষ্টি প্রভৃতি উৎসর্গ করা হয়। শুধুমাত্র মহাষ্টমীর দিনেই ভোগ বিতরণের প্রচলন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল দশমীর দিন মাতৃমূর্তির উদ্দেশে কচুর শাক ও চালতার টক-‌সহ পান্তা ভাতের ভোগ উৎসর্গ করার রীতি রয়েছে। এক সময় মহাষ্টমীর দিন দেড় থেকে দু’হাজার মানুষকে ভোগ খাওয়ানো হত।

আরও পড়ুন
Advertisement