প্রতীকী ছবি।
শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর তো বটেই, গোটা জেলাতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে শমসেরগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় একজনও করোনা অ্যাক্টিভ রোগী নেই, জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকায় মাত্র দু’জন করোনা অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছে। এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করে বাকি মানুষদের ডেকে নিয়ে গিয়ে কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে জঙ্গিপুর ও শমসেরগঞ্জে। ৭২ ঘণ্টা আগেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে কবে, কোথায় তাঁদের টিকাকরণ করা হবে, যাতে তারা সময়ে হাজির হতে পারেন। এই দু’টি ব্লকই টিকাকরণে অনেকটাই পিছনের সারিতে ছিল জেলায়।
এই দুই কেন্দ্রে শনিবার নির্বাচন ঘোষণার দিন পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে জঙ্গিপুরে ৯০ শতাংশ ও শমসেরগঞ্জে ৮০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ।
বিধানসভা নির্বাচনে করোনা সংক্রমণ আটকাতে গত এক সপ্তাহে শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে টিকাকরণের এই সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে গোটা জেলাতেই এই দুই এলাকার কায়দাকেই রপ্ত করতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
এই দুই কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত এক সপ্তাহে জঙ্গিপুর পুর এলাকায় ১০৪ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ শেষ হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকে গ্রামীণ এলাকায় ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা গিয়েছে। শমসেরগঞ্জে তা ছাড়িয়েছে ৮০ শতাংশ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুই ব্লক ও পুরসভায় ২২টি করে ৪৪টি শিবিরের মাধ্যমে গত রবিবার থেকে এই বিশেষ টিকাকরণ চলছিল।
জঙ্গিপুরের পুর প্রশাসক মোজাহারুল ইসলাম জানান, “অবশিষ্ট টিকাকরণ করতে নয়া পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। যাদের টিকাকরণ হয়নি তাদের একটি করে স্লিপ ইস্যু করে নির্দিষ্ট টিকাকরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
বিশেষত যাদের দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়া রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। কাছের কোনও সরকারি স্কুলে হবে সেই টিকাকরণ কেন্দ্র। যদিও ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ১০৪ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে।”
জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে জঙ্গিপুর পুরসভা।
রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১.২৫ লক্ষ টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা গিয়েছে গত ৭ দিনের চেষ্টায়।
শতাংশের হিসেবে ৯০ শতাংশের বেশি। সোমবার থেকেই সমীক্ষা শুরু করা হবে বাড়ি বাড়ি।
যারা টিকা পায়নি তাদের চিহ্নিত করে এলাকার কোনও স্কুল থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা দ্রুত টিকাকরণ করবেন তাদের।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের আশা, এ সপ্তাহের মধ্যেই সে কাজ শেষ করে ফেলা যাবে।
শমসেরগঞ্জেও টিকাকরণ ছাড়িয়েছে ৮০ শতাংশ। একই কায়দায় সেখানেও বাড়ি বাড়ি যাবেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। টিকা যাঁরা নেননি, তাঁদের শনাক্ত করে টোকেন দেবেন। সেই টোকেন দেখিয়ে শিবিরে গিয়ে টিকা নেবেন তাঁরা। পুরো বিষয়টি নজরদারি করবেন এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওই স্লিপ দেখে পরবর্তীতে কাদের টিকাকরণ তা চিহ্নিত করা সহজ হবে। এক সপ্তাহ ধরে যে টিকাকরণ চলছিল তাতে প্রতি শিবিরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার করে।
এ বারে টিকা কেন্দ্র হবে পাড়ায় পাড়ায় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে টিকাদানের লক্ষ্য নিয়ে।
এই দুই ব্লকের টিকাকরণের সাফল্যকে জেলা জুড়ে টিকাকরণে কাজে লাগানো হবে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল।
সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার বকেয়া থাকা এই দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন এবং রাজ্যের বকেয়া থাকা পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।
মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক ইউনিটও একই দাবি তুলেছিল। তাঁদের দাবি ছিল, এটাই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। দ্রুত নির্বাচন করতে হবে।
তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি তথা জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘গত ১৫ দিন ধরে শমসেরগঞ্জে একজন করোনা অ্যাক্টিভ রোগী নেই। জঙ্গিপুর বিধানসভায় মাত্র দু’জন কোভিড অ্যাক্টিভ রোগী আছে। তাই আমরা মনে করছি এখনই নির্বাচনের আদর্শ সময়। তাই আমরা দ্রুত নির্বাচন চাইছিলাম।’’