প্রতীকী ছবি।
চাইলেই আর যে কারও হাতে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরিয়ে দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট আবেদনের ভিত্তিতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জেলা নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নেবেন, অন্য দল থেকে যারা যোগ দিতে চাইছে তাদের মধ্যে কাকে নেওয়া হবে আর কাকে নয়। দলে বেনোজল ঢোকা ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত বলে নেতৃত্বের দাবি। সেই সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে রাখা হচ্ছে ‘কমপ্লেন বক্স’। যে কেউ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি বা নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে বাক্সে ফেলে যেতে পারবেন। গোপন রাখা হবে তাঁদের পরিচয়।
সম্প্রতি নদিয়াকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হয়েছে তরুণ প্রজন্মের নেতা জয়ন্ত সাহাকে। দিন কয়েক আগে তিনি জেলার সমস্ত বিধায়ক ও পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই সাংগঠনিক জেলায় চাইলেই আর অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া যাবে না। এত দিন অনেক সময় স্থানীয় স্তরে সাংসদ, বিধায়ক বা পদাধিকারীরা নিজেদের মতো করে অন্য দলের নেতাকর্মীদের হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়ে যোগদান করাতেন। অনেক সময়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে খবরই থাকত না। এ বার থেকে আর সেটা করা যাবে না।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বুথ স্তরে যদি কেউ অন্য দল থেকে যোগ দিতে চান, সে ক্ষেত্রে অঞ্চল কমিটি সংশ্লিষ্ট বুথের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবে। তাদের মতামত নিয়ে ব্লক নেতৃত্বর মাধ্যমে জেলা নেতৃত্বকে জানাতে হবে। আবার অঞ্চল স্তরে অন্য দলের কোনও নেতা যদি তৃণমূলে যোগ দিতে চান, তা হলে ব্লক নেতৃত্বের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্বকে জানাতে হবে। ব্লক স্তরে অন্য দলের কাউকে যোগদান করাতে চাইলে জেলা নেতৃত্বকে জানাবেন ব্লক নেতৃত্ব। জেলা স্তরের কেউ যোগদান করতে চাইলে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জয়ন্তর ব্যাখ্যা, “আমরা চাই না, একেবারে বুথ স্তর থেকে দলের কোনও নেতাকর্মী অসম্মানিত হোন। যাঁরা এত দিন দলের ঝান্ডা ধরে রেখেছেন তাঁরা সব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সুদিনে অন্য দল থেকে এসে আর ছড়ি ঘোরানো যাবে না।”
তিনি জানান, অন্য দল থেকে কেউ আসতে চাইলে তাঁকে আবেদন করতে হবে। জেলা নেতৃত্ব তাঁর সততা, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং ভাবমূর্তি খতিয়ে দেখবেন। জয়ন্ত বলেন, “যাঁরা অন্য দলে আছেন তাঁদের বাদ দিয়েই তো আমরা জয়ী হয়েছি। তাই তারা আমাদের দলে যোগ দিন বা না দিন তাতে দলের সংগঠনে কোনও ফারাক হবে না।”
এ দিনই কৃষ্ণনগরে দলের জেলা কার্যালয়ে ‘কমপ্নেন বক্স’ রাখা হয়েছে। দলের কোনও নেতা-জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে, তিনি তথ্যপ্রমাণ-সহ লিখিত অভিযোগ বাক্সের ভিতরে ফেলে যেতে পারবেন। বাক্সের চাবি থাকবে জেলা সভাপতির কাছে। তিনি সপ্তাহে এক দিন করে বাক্স খুলে অভিযোগ দেখবেন। প্রয়োজনে সাংগঠনিক স্তরে পদক্ষেপ করা হবে।
জয়ন্ত বলেন, “অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। দলের ভিতরে স্বচ্ছতা রাখতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, আগামী দিনে ব্লক স্তরেও একই ধরনের নালিশ-বাক্স রাখা থাকবে। সেই সব বাক্সে জমা পড়া অভিযোগগুলিও জেলা সভাপতি খতিয়ে দেখবেন।