প্রতীকী ছবি।
বামেদের যখন প্রত্যাবর্তনের লড়াই, তৃণমূলের কাছে পরিবর্তনের। কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়নের কথা বলছেন কেউ আবার কেউ জোর দিচ্ছেন প্রাথমিক নাগরিক পরিষেবায়। তাহেরপুরের পুরবোর্ড ধরে রাখার লড়াইয়ে এবার বাড়ি বাড়ি প্রচারে স্থানীয় ইস্যুকে তুলে ধরেই নিজেদের আগামীর পরিকল্পনা মানুষের কাছে তুলে ধরছে দুই দলই।
২০১৫ সালেও পরিবর্তনের ভরা বাজারে তাহেরপুরে ক্ষমতায় এসেছিল বামেরা। দক্ষিণবঙ্গে তাদের একমাত্র পুরবোর্ড ছিল এটাই। এরপরে গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তারা। লোকসভা ভোটে তাহেরপুরে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি আর বিধানসভা ভোটে প্রথম স্থানে ছিল তৃণমূল। বিজেপি আর তৃণমূলের লড়াইয়ের মাঝে লোকসভা ভোটে বামেরা এবং বিধানসভা ভোটে মোর্চা তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিল। এ বার তাই নিজেদের দখলে থাকা পুরসভায় হারানো জমি উদ্ধারের চ্যালেঞ্জ বামেদের কাছে। পুর এলাকার ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে সিপিএম এবং একটিতে আরএসপি প্রার্থী দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের কাজও শুরু করেছে তারা। স্থানীয় ভিত্তিতে নিজেদের পুরবোর্ডের উন্নয়ন এবং রাজ্য সরকারের বঞ্চনার কথা সেই প্রচারে তারা রাখছে। এর পাশাপাশি শিক্ষা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই মুহূর্তে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘নিবিড় জনসংযোগের’ কাজ যেমন শুরু করেছে আবার দিন কয়েকের মধ্যেই ইস্তাহার ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগও শুরু হয়েছে। আর সেখানে থাকছে পুরবাসীদের জন্য একাধিক প্রস্তাব। অনলাইন পঠনপাঠনের কথা মাথায় রেখে শহরে ফ্রি ওয়াইফাই জোনের তৈরির পরিকল্পনার কথা রয়েছে ইস্তাহারে। এর পাশাপাশি ক্ষমতায় ফিরলে আগামী দিনে নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও রয়েছে বাম ইস্তাহারে। এ ছাড়া শহরে অবস্থিত বন্ধ হয়ে থাকা আরআইসি-র জমি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে পুরসভার হাতে দিলে সেখানে যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পের কাজ করা হবে। তাহেরপুরে প্রত্যাবর্তনের জন্য তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানার হাতিয়ার হিসাবে বামেরা এই দাবিকে সামনে রাখছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএমের তাহেরপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুপ্রতীপ রায় বলেন, “কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়নের ওপরেই আমরা জোর দিচ্ছে। সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।”
মনোনয়ন পর্বের পর বাড়ি বাড়ি জনসংযোগের কাজ শুরু করেছে তৃণমূলও। ২০১০ সালে পরিবর্তনের হাওয়া যখন রাজ্যে। সেই সময়ে নির্দলের সমর্থনে তাহেরপুরে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। পাঁচ বছর পরের পুরভোটেই অবশ্য তাদের সরতে হয়েছে ক্ষমতা থেকে। গত বিধানসভা ভোটে তাহেরপুরের অধিকাংশ ওয়ার্ড থেকে যেমন তৃণমূল লিড নিয়েছে তেমনই সার্বিক ভাবে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখেও এই শহরে প্রথম স্থানে আছে তারা। যা বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে শাসক শিবিরকে। পুরভোটের প্রচারে নেমে এ বারে যাঁরা প্রথম প্রার্থী হয়েছেন, বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের কাছে তাঁদের পরিচিতি করিয়ে দেওয়ার কাজে তারা নেমেছে। এর পাশাপাশি বাম পরিচালিত বর্তমান পুরবোর্ডের কাজের ব্যর্থতার খতিয়ানও তারা তুলে ধরছে। রাস্তা, জল, আলোর সমস্যাকে তারা বেশি করে সামনে রাখছে। আবার আগামী দিনে তাদের প্রতিশ্রুতি ভাল রাস্তা উপহার দেওয়ার। এছাড়াও পুরবাসীদের সকলের বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারা দিচ্ছে। সঙ্গে উন্নত নাগরিক পরিষেবা।
তাহেরপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি সত্যেন্দ্রনারায়ন ঘোষ বলেন, “আমরা ক্ষমতায় এলে উন্নত পরিষেবা দেব। বাম আমলের রাস্তার সমস্যা দূর করব, পানীয় জল সকলের কাছে পৌঁছাব। সেই বার্তা তুলে ধরছি।”