সেই অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র।
লালগোলা থানা ভবনের পিছনে পড়ে রয়েছে অসংখ্য গাড়ি। প্রায় সবক’টিরই লজঝড়ে অবস্থা। তার মধ্যেই পড়ে রয়েছে একটি অ্যাম্বুল্যান্সও। সেই গাড়ির বন্ধ জানলার কাচ দিয়ে উঁকি দিলেই স্পষ্ট হবে, গাড়ির অন্দর যথেষ্টই নতুন। রং একেবারেই নতুনের মতো।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেটি লালগোলার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ব্যবহারের অ্যাম্বুল্যান্স। এক সময় দীর্ঘদিন সেটি হাসপাতালে চত্বরে পড়ে ছিল। এখন তার ঠিকানা বদল হয়েছে। নতুন করে ঠাঁই হয়েছে লালগোলা থানা চত্বরে। করোনা আবহে যখন রোগীর পরিবার সময়মতো অ্যাম্বুল্যান্স পান না বলে বারবার অভিযোগ ওঠে তখন ওই অ্যাম্বুল্যান্স এভাবে পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ায় অনেকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লালগোলার বাসিন্দাদের অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ তহবিলের টাকায় ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে লালগোলা কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালকে আধুনিক সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছিলেন। লালগোলার বাসিন্দাদের দাবি, কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আসার পর থেকে একদিনও সেটি চালানো হয়নি। হাসপাতালের একটি ঘরে পড়ে ছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি। তারপর স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে গত বছর সেটি সাগরদিঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সে সময় গ্রামবাসীদের একাংশ অ্যাম্বুল্যান্স আটকে বিক্ষোভ দেখান। তারপর অ্যাম্বুল্যান্সটি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তারপর থেকে সেটি সেখানেই পড়ে রয়েছে। লালগোলার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক মহম্মদ ইসমাইল হক বলেন, ‘‘আমার মা করোনায় আক্রান্ত হলে মার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক মাকে বহরমপুরে স্থানান্তরিত করেন। ওই হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে গেলে তিনগুণ ভাড়া চান। আমি বাধ্য হয়ে তাতে রাজি হই। অথচ সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে কিছু ভাবছেই না কেউ।’’ এ নিয়ে লালগোলার বিডিও সুব্রত ঘোষ জানান, অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার আগে স্বাস্থ্য দফতরের ‘নো অবজেকশন’ লেটার নেওয়া হয়নি। তাই অ্যাম্বুল্যান্সের তেল এবং চালকের খরচ সরকারের তরফে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই জন্য অ্যাম্বুল্যান্সটি চালানো যায়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘করোনা রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স আছে। এখনও কোনও সমস্যা হয়নি। কেউ ব্লক প্রশাসনে যোগাযোগ করলে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে অ্যাম্বুল্যান্সটি বর্তমান পরিস্থিতিতে চালানো যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’