ফাইল চিত্র।
নামেই বিধিনিষেধ। গত কয়েকদিন থেকে বেপরোয়া মানুষের ঢল নামল জেলা জুড়ে সর্বত্র। বাজার, হাট, দোকান পাট খোলা বা বন্ধের বালাই নেই কোথাও। অটো, টোটোই শুধু নয়, বেসরকারি বাসও পথে চলছে অবাধে। মাস্ক পড়ার রেওয়াজও উঠে গেছে প্রায়। সব মিলিয়ে বেলাগাম জনজীবন ফের বয়ে আনছে আতঙ্কের বার্তা।
খোদ বহরমপুর শহরের বুকে গত কয়েকদিনের ভিড় দেখে চমকে উঠছেন অনেকেই। এমনিতেই করোনা জোনের সব চেয়ে রেড মার্ক এলাকা বহরমপুর। অথচ লাগাম নেই রাস্তায় না পথচারীদের, না যানবাহনের।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এই মুহূর্তে জেলায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না কারণ জেলায় করোনার অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ১৫৪। সোমবার মাত্র ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন জেলায় করোনায়। রবিবার ছিল ১৪ জন। শনিবার ১৫ জন। মঙ্গলবার তা বেড়ে হয়েছে ১৮। প্রায় একমাস থেকে বিধি নিষেধ চলছে এ জেলাতেও। আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছে। জমায়েতে নিয়ন্ত্রণ ও যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার কারণেই এই সাফল্য এসেছে।
কিন্তু ফের ভেঙে পড়েছে সব বিধি নিষেধ। সুতি, শমসেরগঞ্জ, লালগোলা সর্বত্র চলছে বিভিন্ন বাগানে তাসের আড্ডা। সকাল বিকেল ঘর ছেড়ে জমছে ক্লাবে, চায়ের দোকানে ও পাড়ার রকে আড্ডা।
নিষেধবিধি ভেঙে শহরের পথেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বাইকের দাপট কার্যত তছনছ করে দিয়েছে বিধিনিষেধের লক্ষ্মণরেখাকে। তাই আশঙ্কা বাড়ছে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও। যে পুলিশকর্মীরা দু’দিন আগেও রাস্তায় বেরোনো মানুষকে ঘরে ঢোকাতে বলপ্রয়োগ করে গ্রেফতার করতেও ছাড়েননি, আজ তারা রাস্তায় নেই বললেই হয়।
এমনকি যে সব চিকিৎসকেরা জমায়েত এড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, বুধবার বহরমপুর, রঘুনাথগঞ্জ, লালবাগের চিকিৎসকদের চেম্বারগুলিতেও দেখা গেল লাগামছাড়া ভিড়। মুখে মাস্কের বালাই ছাড়াই চিকিতসকের চেম্বারে জমায়েত হয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন রোগীরা।
শমসেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বলছেন, “প্রথম দিকে ঠিকই ছিল। কিন্তু গত ৭ দিন থেকে কোথাও কোনও নিষেধবিধি আছে বলে মনে হয় না। এখন ‘করোনা নেই’ বলে ভয় কেটেছে অনেকেরই। এর ফলে আবার সেই পূর্বাবস্থায় ফিরে আসছি আমরা। এখন সব খোলা। অথচ এই সময় বিধিনিষেধ বেশি জরুরি যাতে মাস দুয়েকের মধ্যেই করোনার যে তৃতীয় ঢেউ আসছে তা প্রতিরোধ করা যায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘টিকা নিলেন মানেই সব নয়। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার উঠেই গেছে। কাজেই বেশি সতর্কতা দরকার।”
ফরাক্কার এক চিকিৎসক সজল পণ্ডিত বলছেন, “ফরাক্কাতেও কোনও বিধি নিষেধের বালাই নেই। গাড়ি চলাচল বন্ধ না করলে জমায়েত বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার শিশুদের নিয়ে বাইরে বেরোচ্ছেন। তৃতীয় ওয়েভে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানানো হয়েছে। আগামী দু মাস তাই শিশুদের যত্নে রাখুন। ছোটদের প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে এখন থেকেই প্রয়োজন মাফিক। ডিম অবশ্যই নিজেও খান, ছেলেমেয়েদেরও খাওয়ান।”