দূরত্ববিধি না মেনেই আধার সংশোধনের জন্য লাইন। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
রাজ্য জুড়ে জারি থাকা কঠোর বিধি জুলাইয়ের ১৫ অবধি পর্যন্ত বাড়িয়ে সরকারের নয়া নির্দেশে রাশ আরও কিছুটা আলগা হয়েছে চলতি মাসের পয়লা থেকে। তবে সেই আলগা শাসনের ফাঁক গলে কঠোর স্বাস্থ্যবিধিকে হালকা করে না দেখে বরং মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহারে আরও সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা। যদিও জেলায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রায় শূন্যে নেমে আসায় জেলাবাসীর মধ্যে বিধি অমান্যই নজরে পড়েছে সর্বত্র। মাস্ক ছাড়া বাসে ট্রেনে বেড়েছে অবাধ যাতায়াত, আর তাতেই আশঙ্কিত চিকিৎসক থেকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
অথচ অন্যান্য জায়গার মতো করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যপক প্রভাব পড়েছিল মুর্শিদাবাদেও। স্বাস্থ্য ভবনের বুলেটিন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জেলায় ৩১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন। চলতি বছরের ভোটার তালিকা অনুযায়ী জেলায় মোট ভোটার ৫৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৪৭ জন। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জেলায় মোট জনসংখ্যা ৭১ লক্ষ। কোউইন পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৮ ঊর্ধ্ব মোট ১১ লক্ষ ৬ হাজার ৯৭৯জন প্রতিষেধক পেয়েছেন। বহু মানুষের করোনা প্রতিষেধক নেওয়া বাকি।
ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন উদ্বেগ বাড়িয়েছে দেশের। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কেরল থেকে করোনা এই প্রজাতির খোঁজ মিললেও রাজ্যে এখনও পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। তবু করোনার শক্তিশালী এই স্ট্রেন নিয়ে তটস্থ রাজ্যের পাশাপাশি জেলার চিকিৎসক মহলও। ঝুঁকি কম থাকলেও অক্টোবরে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় তার মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জেলা হাসপাতালে। তার মধ্যেই মানুষের মাস্ক ব্যবহারে অনিচ্ছা, বারেবারে হাত না ধোয়া, বেপরোয়া গতিবিধিতে উদ্বিগ্ন জেলার চিকিৎসকরা। পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা করাতেও তাঁদের অনীহা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন মেডিক্যাল কলেজের সহ অধ্যক্ষ অমিয় কুমার বেরার।
করোনার প্রথম ঢেউ সরে যাওয়া ইস্তক মানুষের মধ্যে করোনা বিধি মেনে মাস্ক পড়া, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার কমতে শুরু করেছিল। চলতি বছর মধ্য এপ্রিল থেকে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে।
মে মাসের শুরুতে জেলায় ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের সময় নিজেকে রক্ষা করতে মানুষজনের মধ্যে ফিরে এসেছিল মাস্কের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার।
এমনকি সে সময় সচেতনভাবে তাঁদের ভিড় এড়িয়ে যাওয়াও নজরে পড়েছিল। তবু রোখা যায়নি তাদেরই বহু আত্মীয় অনাত্মীয়ের অকাল মৃত্যু। তারপরে সরকারের প্রায় একমাস ব্যাপী কড়া বিধি নিষেধে ভিড় ঠেকাতে কঠোর পুলিশি শাসনে জেলায় করোনা সংক্রমণ আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও ভয়াবহ সেই করোনা পরিস্থিতিতেও গ্রামীণ এলাকায় বিধি মানতে অনড় ছিলেন মানুষ, যা নিয়ে চিন্তা বেড়েছিল জেলা পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের।
অমিয় বেরা বলেন, “রুটি রুজির জন্য বাড়ির বাইরে বেরোতেই হবে। তা বলে কখনই অসতর্ক ভাবে নয়।অসতর্ক হলে নিজের জীবনের দাম নিজেকেই দিতে হবে।”