নিজস্ব চিত্র।
ইউটিউব দেখে বানানো প্রথম ম্যাঙ্গো কেকটা পুড়ে ঝামা হয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি কল্যাণীর পরমা মুখোপাধ্যায়। ফেসবুক আর ইউটিউব থেকে শিখে নিত্যনতুন খাবার তৈরিতে আপাতত বেশ হাত পাকিয়ে ফেলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ। সারা দিন বাড়িতে থাকা দুই মেয়ে প্রায়ই বায়না ধরে এটা-ওটা খাওয়ার জন্য। হোটেল থেকে খাবার আনাতে ভয় হয়। মেয়েদের আবদার মেটাতেই পরমার ভরসা ইন্টারনেট।
হাসতে হাসতে পরমা বলেন, “আমাদের বাড়ির চারদিকে অনেক মানুষ আছেন যাঁরা দেশের নানা জায়গায় আইটি সেক্টরে কাজ করেন। লকডাউনে প্রায় সবাই ফিরে এসে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন এখনও। তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায়ই নানা রান্নার সুবাস ভেসে আসে। তখনই মেয়েদের বায়না শুরু হয়ে যায়। বরও ধুয়ো তোলে ওদের সঙ্গে।” সেই সম্মিলিত বায়নাক্কা মেটাতেই তাঁকে ‘শেফ’ হয়ে কখনও বানাতে হচ্ছে আইসক্রিম, কখনও বা আফগান চিকেন!
পরমা একা নন। এই চিত্র কমবেশি সব জায়গায়।
কৃষ্ণনগরের দীপান্বিতা সেনের স্বামীর রেস্তরাঁ থাকলেও তাঁর নেশা ফেসবুক-ইউটিউব ঘেঁটে নিত্যনতুন রেঁধে বাড়ির লোকজনকে খাওয়ানো। বাংলাদেশের একটি ভিডিয়োয় চুঁই ঝাল দিয়ে মাংস রান্না দেখে নানা জায়গা খুঁজে চুঁই ঝালের গাছ এনে লাগিয়েছেন বাড়িতে।
দীপান্বিতা বলেন, “ইউটিউবে রান্না দেখার অভ্যেস আমার আগেও ছিল। কিন্তু এই ঘরবন্দির সময়ে দেখছি, অনেক নতুন নতুন খাবারের পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগ তৈরি হয়েছে। গৃহবন্দি জীবনে দিনের অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে রান্নার ভিডিয়ো দেখে।”
গত দেড় বছরে রান্না ও খাবারের ইউটিউব চ্যানেল বা ফেসবুক পেজের যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে তার হদিস মেলে বিভিন্ন খাবারের পেজের বা ভিডিয়োর লিঙ্ক দেখলেই। সে সবে লাইক আর কমেন্টের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। খাবার সংক্রান্ত এক-একটি ইউটিউব চ্যানেলের লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার বেড়েছে এই করোনা কালে। অনেকেই নতুন রান্না করে খাওয়ার আগে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। মিলছে প্রচুর লাইক আর কমেন্ট। এটাও নেশা হয়ে উঠেছে।
এমনই এক রান্না সংক্রান্ত ইউটিউব চ্যানেলের অ্যাডমিন দীপিকা বিশ্বাস জানাচ্ছেন, বছর দুয়েক আগেও তাঁর চ্যানেলে যেখানে দেড় লাখ মতো সাবস্ক্রাইবার ছিল, করোনাকালে তা বেড়ে এখন প্রায় পাঁচ লাখ সত্তর হাজারে পৌঁছেছে। আসলে দীর্ঘ ঘরবন্দির সময়ে যেমন কেউ গাছ লাগাচ্ছেন, কেউ পুষছেন মাছ, পাখি, কুকুর, বিড়াল, একঘেয়েমি কাটাতে অনেকেই দেশি-বিদেশি রান্নায় মন দিয়েছেন। শুধু বাড়ির গিন্নিরাই নন, অনেক পুরুষও এ রসের রসিক।