bengal flood

Bengal flood: ‘কী খাচ্ছিটুকুও কেউ জানতে চায়নি’

শমসেরগঞ্জে বাসুদেবপুর বেসিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে গত তিন দিনেও কোনও সরকারি ত্রাণ জোটেনি ভাঙন বিধ্বস্ত একটি পরিবারেরও।

Advertisement
বিমান হাজরা
শিবপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫৮
ত্রাণ শিবিরে রান্না।

ত্রাণ শিবিরে রান্না। নিজস্ব চিত্র।

নামেই সরকারি ত্রাণ শিবির। কিন্তু সেখানে ত্রাণের বালাই নেই। শমসেরগঞ্জে বাসুদেবপুর বেসিক স্কুলের সেই ত্রাণ শিবিরে গত তিন দিনেও কোনও সরকারি ত্রাণ জোটেনি ভাঙন বিধ্বস্ত একটি পরিবারেরও। ত্রাণ শিবিরে থাকা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ আশপাশের দোকান থেকে মুড়ি, চিড়ে, পাঁউরুটি কিনে খাচ্ছেন। কেউ বা চালটুকু কিনে এনে রান্না চড়িয়েছে স্কুল ঘরেই। কেউ বা রান্নার ফাঁকেই কুলো নিয়ে বসে গেছেন বিড়ি বাঁধতে।

বাসদেবপুর স্কুলে ওই ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ শিবিরে ৪৮টি পরিবার রয়েছে। তাদেরই একজন সীতামনি মণ্ডল। বলছেন, “সোমবার যে দিন স্কুলে ঢুকেছিলাম সেদিন রাতে পঞ্চায়েত থেকে দিয়েছিল একটা পাঁউরুটি, কলা, কিছুটা মুড়ি। গত তিন দিনে আর কোনও সরকারি খাবার আসেনি স্কুলে। মঙ্গলবার কিনে খেয়েছিলাম শুকনো খাবার। কাল থেকে রান্না করছি। কিছু তো খেতে হবে? চাল আর আলু দিয়ে আলু ভাতে ফুটিয়ে খাচ্ছি। কী খাচ্ছি, কেমন আছি কেউ খোঁজ নিতে আসেনি গত তিন দিনে কেউই।”

Advertisement

রীতা মণ্ডল বলছেন, “ব্লক অফিস থেকে একদিন এসে নাম লিখে নিয়ে গেছে ত্রাণ দেবে বলে। কিন্তু খাবার আসেনি। বিড়ি বেঁধে যে কটা টাকা ছিল তাই দিয়েই চাল, আনাজ কিনে আনছি। বিড়ি বাঁধাও এখন যাচ্ছে না। পা ফেলার জায়গা নেই স্কুলে। রান্না করতেও সমস্যা হচ্ছে। খুব কষ্টের মধ্যেই আছি।”

শিবিরে রয়েছেন লোহরপুরের লতা মণ্ডল। বলছেন, “যে ক’টা টাকা ছিল চাল, ডাল কিনে এনে কোনওরকমে রান্নাটা করতে পেরেছি তিন দিন। এ ভাবে ক’দিন চলবে জানি না।”

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন পিকু মণ্ডল। স্কুলে বসেই বিড়ি বাঁধছেন। বলছেন, ‘‘পেট কটা তো চালাতে হবে? সোমবার রাত দুটো নাগাদ স্কুলে এসে উঠেছি। রাতে কিছু শুকনো খাবার দিয়েছিল পঞ্চায়েত থেকে। কিন্তু তারপর গত তিনদিন প্রশাসনের ত্রাণ তো দূরের কথা, কেউ একবার খোঁজও নেয়নি। ৪৮টি পরিবার আছে স্কুলে। দোতলা ভবনের ৬টি ঘরের এক একটা ঘরে ৭/৮ টি পরিবার আছি ঠাসাঠাসি করে। মালপত্র রাখবই বা কোথায়, ঘুমোবোই বা কোথায়? কেউ খাবার কিনে খাচ্ছে মুড়ি, রুটি। কেউ চাল কিনে এনে রান্না করছে। ত্রাণ শিবিরের মানে কী, যদি সরকার একটু ত্রাণের ব্যবস্থা না করবে?”

ত্রাণ শিবিরে থাকা গীতা, কনক, রঞ্জন, পুতুল সব পরিবারেরই এক অবস্থা। সবার বাস ছিল নতুন শিবপুর গ্রামে। সোমবার রাতে গোটা গ্রামটাকেই মুছে দিয়েছে গঙ্গার ভাঙন।

স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন অঞ্জলি মণ্ডল। গত বছরের ভাঙনে ঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেই আত্মীয়ের বাড়িও চলে গেছে সোমবারের গঙ্গা ভাঙনে। শমসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহম্মদ রফিক বলছেন, “ব্লক অফিসে ত্রাণ শিবিরের সকলের নাম ধাম পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ আসেনি। তাই কোথা থেকে দেব খাবার? পঞ্চায়েতের পক্ষে ত্রাণ দেওয়ার সামর্থ্য নেই।’’

আরও পড়ুন
Advertisement