প্রতীকী ছবি।
চলতি বছর করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় একশো শতাংশ পড়ুয়া পাশ করায় জেলার কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরের এক একটি সাম্মানিক বিষয়ে আবেদনের সংখ্যা আটশো থেকে হাজার। অথচ কলেজগুলিতে আসন সংখ্যা সীমিত। ফলে এত পড়ুয়াকে কিভাবে তাঁদের পছন্দমত বিষয়ে নিজেদের কলেজে স্থান দিতে পারবেন তাই নিয়ে চিন্তায় কলেজ শিক্ষকরা। নম্বরের ছড়াছড়িতে পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে আদৌ পড়তে পারবেন কি না তাই নিয়ে আশঙ্কায় পড়ুয়ারাও।
যেমন, বহরমপুর গার্লস কলেজ। ওই কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে আসন সংখ্যা ৫০। আবেদন জমা পড়েছে ন’শোটি। বাংলায় আসন সংখ্যা ৬৮। আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ১৪৬টি। ইংরেজিতে আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ১৪২টি আর আসন সংখ্যা মাত্র ৮২টি। ভূগোলের আসন সংখ্যা ৫০ অথচ আবেদন জমা পড়েছে এক হাজারের কাছাকাছি। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগেও আসন সংখ্যা ৫০ অথচ আবেদন জমা পড়েছে ৬০০টি। এখনও একসপ্তাহ বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হতে চেয়ে আবেদন করবার সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। ওই কলেজের পড়ুয়া ভর্তি কমিটির সদস্য অধ্যাপক অনুপ কুমার কারক বলেন, “আসন সংখ্যা সীমিত। আগের মতো যদি ১০ শতাংশও আসনও সরকারি নির্দেশে বাড়ানো হয়, তা হলেও এত আবেদনকারীর ভর্তি সম্ভব নয়।”
আবার কৃষ্ণনাথ কলেজে সাম্মানিক বিষয়ে ভর্তি হতে চেয়ে এখনও পর্যন্ত ৩০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ওই কলেজের পক্ষে সুজাতা বাগচী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আসন সংখ্যা ১,১০০। আগামী কয়েকদিনে আরও আবেদন জমা পড়বে।” জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজের অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান আহমেদ বলেন, “আমাদের কলেজে পাস ও অনার্স মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ২০০। এ বছর এখনও পর্যন্ত ওই দুই বিভাগে আবেদন জমা পড়েছে ১১ হাজারের বেশি।”
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি শুরু হলে জেলার অনেক কলেজের চাপ কিছুটা কমবে বলে মনে করেন অধ্যক্ষরা।
তবে অনেক পড়ুয়া নিজের বিভাগের প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আবেদন করায় আবেদন পত্রের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে বলে মনে করেন কলেজ শিক্ষকরা। পাশাপাশি চলতি বছর আবেদন পত্রের জন্য কোনও ফি না লাগার কারণেও একজন পড়ুয়া একাধিক কলেজে আবেদন করায় আবেদন পত্রের সংখ্যা স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে বলে মনে করেন শামসুজ্জামান। এছাড়া একজন পড়ুয়া একসঙ্গে একাধিক কলেজে ভর্তি হওয়ায় যে কোনও একটি কলেজ থেকে তাঁর নাম না কাটানোয় একটা দীর্ঘসময় অন্য কোনও পড়ুয়া সেই জায়গায় ভর্তি হতে পারেন না। আর প্রত্যেক বছর এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় সব কলেজকেই। শামসুজ্জামান মনে করেন “একজন ছাত্র এক কলেজে ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক একটি অভিন্ন নম্বর চালু করলে এই সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারত।”
কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সুকুমার মাল বলেন, “প্রতি বছর এই সংখ্যাতেই আবেদন জমা পড়ে। কোনও কোনও বছর এর থেকে বেশিও জমা পড়েছে। তিন থেকে চারটি কাউন্সেলিংয়ের পরেও আসন ফাঁকা থাকে। দেখা যায় রেজিষ্ট্রেশনের আগে পাস কোর্সের পড়ুয়ারা সাম্মানিক বিষয়েও ভর্তি হয়। তবে এ বছর সাম্মানিকের তুলনায় পাস কোর্সের ভর্তির সংখ্যা বেশি হবে।” পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক রাজীব সেন বলেন, “ প্রত্যেক পড়ুয়াকে তাঁর পছন্দের বিষয়ে পড়ানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।”