রক্ত দিচ্ছেন আনারুল। নিজস্ব চিত্র।
ভিড় সামাল দিচ্ছিলেন ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের। সেই সময় এক পরিচিতের ফোন। এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পৌঁছন তিনি। ওই হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর রক্তের প্রয়োজন ছিল। তাঁকে রক্ত দিয়ে প্রাণে বাঁচালেন সিভিক ভলাটিয়ার আনারুল হক।
জানা গিয়েছে, গুরুতর অসুস্থ আকলেমা বিবির হিমোগ্লোবিন নেমে এসেছিল ৬ এর নীচে। চিকিতসক জানিয়ে দেন, রক্ত না দিলে যে কোনও সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। হাসপাতালে ভাঁড়ার শূন্য। মার শয্যার পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক যুবক। ওই মহিলার ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত পেতে হন্যে হয়ে খোঁজ শুরু করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব দাস। খবর যায় সাগরদিঘি থানাতেও। সেখানেই দেওয়ালে সাঁটা ছিল সিভিক থেকে ওসি পর্যন্ত সকলের রক্তের গ্রুপ। তখনই দেখা যায় সিভিক ভলান্টিয়ার আনারুলের রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। ওসি সুমিত বিশ্বাস ফোন করে আনারুলকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেন। রক্ত দিয়ে যখন বাড়ালায় বাড়িতে ফিরলেন আনারুল, তখন বেলা প্রায় তিনটে। বছর ৩৪ বয়সের আনারুলের স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওই যুবক বলেন, “আগেও দু’বার রক্ত দিয়েছি মুমূর্ষু রোগীকে। মানুষ তো বিপদে পড়েই অন্যের সহায্য চায়। স্যরের ফোন পেয়ে আর তাই দেরি করিনি। এক সহকর্মীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই।’’
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব বলছেন, “আমাদের সংস্থায় ৩৫ জন কর্মী রয়েছেন যাঁরা অন্যের প্রয়োজনে রক্ত দেয়। সাগরদিঘিতে একটিই মাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। দু’বছর হল চালু হয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। আমাদের কর্মীদের মধ্যে তিনজনের রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’। কিন্তু তাঁরা সকলেই দু’সপ্তাহের মধ্যে রক্ত দিয়েছেন।’’ আকলেমার ছেলে সাইদ শেখ বলছেন, “রক্তের জন্য কম দৌড়োদৌড়ি করিনি। কিন্তু কোথাও ওই গ্রুপের রক্ত মিলছিল না। ওই দাদা না এগিয়ে এলে যে কী হত! ওঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’