স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে উত্তেজিত জনতার ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে তুমুল ভাঙচুর চালালেন মৃতের আত্মীয়-বন্ধুরা। একাধিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশকর্মীদের আক্রমণ ও মারধরের অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে রবিবার সকালে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় পলাশিপাড়া প্রীতিময়ী গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা পরিষেবা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকা একাধিক আসন্নপ্রসবাকে ভয়ে নিয়ে চলে যান বাড়ির লোক।
পুলিশ সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের নওদা থানার বালি এলাকার দুই ভাই আল্লারেখা শেখ ও মহিরুল শেখ গরুর ব্যবসা করেন। রবিবার সকালে ব্যবসার জন্য মোটরবাইকে পলাশিপাড়ার সাহেবনগর পোতারপাড়া এলাকায় যাচ্ছিলেন তাঁরা। সাহেবনগরের কাছে টেংরা মারি সেতু পার করার পর এক লরির সঙ্গে তাঁদের বাইকের সংঘর্ষ হয়। গুরুতর জখম হন দু’জনেই।
পরিবারের অভিযোগ, সকাল সাতটায় দু’জনকে প্রীতিময়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা না করেই তাঁদের তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে রেফার করে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু সেখানে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে বলতেই দুর্ব্যবহার করেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। টানাপড়েনে দেরি হতে থাকে। সেখানেই কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় আল্লারেখা শেখের। এর পর তড়িঘড়ি মহিরুল শেখকে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহরমপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানেও কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা না-করে মহিরুলকে কলকাতা স্থানান্তরিত করেন বলে অভিযোগ।
এ দিকে আল্লারেখার মৃত্যুর কথা জানার পরই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবারের লোক। মুর্শিদাবাদের বালি এলাকা থেকে তাঁদের আরও আত্মীয় এসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মীদের উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তুলকালাম শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন ওয়ার্ডের দরজা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, একাধিক শয্যা এবং ওই কেন্দ্রের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স। চিকিৎসক বরুণ গাইন এবং একাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে মারা হয় বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষণের জন্য সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যান। অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে পলাশিপাড়া থানার পুলিশ আসার পর একাধিক পুলিশকর্মীকে আক্রমণ করে মারে বিক্ষোভকারীরা। তখন তেহট্ট থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে আতঙ্কে ভর্তি থাকা রোগী এমনকি গর্ভবতী মহিলারা পালাতে শুরু করেছেন।।
আহত এএসআই সুকুমার সরকার বলেন, “হামলাকারীরা আমাকে মারতে-মারতে টেনে রাস্তায় ফেলে। তার পরও অনেক ক্ষণ তারা থামেনি। আমার জামাও ছিড়ে দেওয়া হয়েছে।” বেশ কিছু ক্ষণ পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে এক জন চিকিৎসক ফিরে এলে রোগী দেখতে থাকেন।
পলাশিপাড়া প্রীতিময়ী গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “আমি ছুটিতে আছি। কী ঘটেছে, কেন হয়েছে তা বলতে পারব না।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায় বলেন, “পুলিশের তরফে তদন্তের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।”
এ ঘটনার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে যান তেহট্ট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রণদাপ্রসাদ বসু। তিনি বলেন, “মৃত ব্যক্তির জন্য আমরা শোকাহত। কিন্তু তাই বলে সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে নষ্ট করা ওঁদের উচিত হয়নি। এলাকার লোক স্বাস্থ্যকর্মীদের মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।”