—প্রতীকী চিত্র।
বিধায়ক অসীম সরকারের একের পর এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে আগে থেকেই অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। এ বার তিনি বাংলায় বিজেপির সব লোকসভা আসন হেরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করায় তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম লিখেছেন, “২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি যদি বাংলা থেকে একটা আসনও না পায়, তথাপিও আমার বিশ্বপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদীজি ভারতবর্ষের রাজ ক্ষমতায় আসবেনই।… নিজেদের ভুলের জন্য যেন নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুঠারাঘাত না করে বসি।”
তবে কি বিজেপি বিধায়ক মনে করছেন যে তাঁর দল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে একটি আসন পাওয়ার অবস্থাতেও নেই? বিশেষ করে যেখানে তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্র বনগাঁ এবং পাশের রানাঘাট জিতবে বলেই ধরে রেখেছে বিজেপি? দিনভর এই চর্চা হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কেন এই পোস্ট?
সোমবার অসীম বলেন, “ও দিকে মোদীজি থাকলেন, আর সেখানে আমাদের দ্বন্দ্বে আসন কমে গেলে লজ্জিত হব না!” তাঁর হুঁশিয়ারি, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব না মিটলে বিজেপির আসন কমবেই।
হরিণঘাটা নদিয়ার অংশ হলেও উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র ও বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে। সম্প্রতি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার মণ্ডল সভাপতি নিয়োগের পর থেকে লোককবি তথা বিধায়ক অসীম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট করে যাচ্ছেন।
তাতে ওই নিয়োগ নিয়ে জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অসীমের অভিযোগ, বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মণ্ডল সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের ইঙ্গিত মিলেছে। বিজেপি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সাংসদের পক্ষ থেকে নতুন মণ্ডল সভাপতি ও জেলা কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে অসীমকে ডাকা হলেও তিনি যাননি। গত সপ্তাহে রানাঘাটে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “হয়তো কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে তা নিয়ে ফেসবুকে লেখা ঠিক নয়।” তার পরেও থামেননি অসীম।
এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা কী করছেন? দলের নেতারা কি অসীমের সঙ্গে কথা বলছেন? বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টা দেখছেন।” অসীমের আশঙ্কা সত্যি করে বনগাঁ-সহ বাংলার সব আসনে কি বিজেপি হেরে যেতে পারে? বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, “যিনি লিখেছেন, তিনিই উত্তর দেবেন!”
বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করেন, “অসীম সরকার বোঝাতে চেয়েছেন, বিজেপি সারা ভারত জুড়ে এ বার অনেক বেশি আসন জিতবে। বাংলার ৪২টি আসনের উপর নির্ভর করতে হবে না। বিজেপির বিকল্প নেই, তাই সবাই বিজেপিকেই ভোট দাও।”
অসীমের দাবি, রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ইতিমধ্যে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “সুকান্তদা বলেছেন, আপনি চুপ করে থাকুন। আমরা দেখছি।” তার পরেই তাঁর সংযোজন, “যা লিখেছি, এর পর আর লেখার কিছু থাকল না।”