বহরমপুরে বহু মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গির সঙ্গে ভাবাচ্ছে ম্যালেরিয়াও। এ বছর ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১২০০ পার করেছে। সম্প্রতি ম্যালেরিয়ায় ভগবানগোলা ২ ব্লকের এক যুবকের মৃত্যুতে উদ্বেগ বেড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।
তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ভিন্ রাজ্য থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন। তার পরে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাঁরা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা করে তাঁরা সুস্থও হয়েছেন। সম্প্রতি ভগবানগোলা ২ ব্লকের যে যুবক ম্যালেরিয়ায় মারা গিয়েছেন তিনিও ভিন্ রাজ্য থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ে ফিরেছিলেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রথমে ওই যুবক চেন্নাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তাঁর ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছিল। তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি ওড়িশায় গিয়েছিলেন। সেখানে গত ৫ নভেম্বর অসু্স্থ হয়ে পড়েন। ১২ নভেম্বর জ্বর নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। পরের দিন নশিপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁর ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শুধু ওই যুবকই নয়, ভিন্ রাজ্য থেকে বহু মানুষ ম্যালেরিয়া নিয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরছেন। এখানেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। ভিন্ রাজ্যে থাকার সময় ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার থেকে শুরু নানা সতর্কমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ‘‘ডেঙ্গির সঙ্গে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ভিন্ রাজ্য থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছেন সেটাও আমাদের নজরে এসেছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর খোঁজ নিয়ে দেখেছে ওড়িশা, ছত্তীশগঢ়, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। মূলত ওড়িশার মালকানগিরি এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রভাব বেশি থাকে বরাবরই। ওড়িশায় মূলত লালগোলা, ভগবানগোলা ১ ও ২ ব্লক, রানিনগর ১ ও ২ ব্লক, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জের শ্রমিকেরা বেশি কাজে যান। শমসেরগঞ্জ, সুতির কিছু শ্রমিক কাজে ওড়িশাসহ ওই সব রাজ্যে কাজে যান। ওই সব রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে সে সব রাজ্যে গিয়ে পরিযায়ীদের অনেকে মশারি ছাড়াই ঘুমান। যার জেরে অনেকেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় ফিরছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় এ বছর প্রায় ১২০০ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা প্রায় ৭০০ জনের বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার তথ্য (মাইগ্রেশন হিস্ট্রি) জোগাড় করতে পেরেছি। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৭০০ জনের মধ্যে প্রায় পৌনে পাঁচশো জনের ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার তথ্য (হিস্ট্রি) রয়েছে। বাকিরা স্থানীয় ভাবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভগবানগোলা ১ ব্লকের ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে ৩৯ জন ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন, ভগবানগোলা ২ ব্লকে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ৫৫ জনের মধ্যে ৪৮ জন ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন। লালগোলার ৩৩ জনের মধ্যে ৩২ জন ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন। রানিনগর ১ ব্লকের ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন। ভিন রাজ্যে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
লালগোলা, ভগবানগোলা ১ ও ২ ব্লক, রানিনগর ১ ও ২ ব্লক, মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জের শ্রমিকেরা ওড়িশার দিকে কাজে যান কেন? সেখানে কী পারিশ্রমিক বেশি? বেঙ্গল লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক দুলাল শেখ বলেন, ‘‘পারিশ্রমিক বরং কেরলে বেশি। আসলে এই সব এলাকার মানুষের ওড়িশা, তামিলনাড়ুর দিকে যাওয়ার চল হয়ে গিয়েছে। স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘১৫ দিন আগেই ওড়িশায় খুব জ্বর হচ্ছিল। সে সময় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেখানে থাকা শ্রমিকদের সচেতন করেছি।’’ বেশি অসুস্থ হলে ফেরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।