ব্যারাক স্কোয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। —ফাইল চিত্র।
ব্যারাক স্কোয়ারকে বহরমপুরের ফুসফুস বলা হয়। সকাল-সন্ধ্যা তো বটেই, রাত পর্যন্ত বহরমপুরের আট থেকে আশি অনেকেই সেখানে ভিড় জমান। শরীরচর্চা করতে অনেকেই ব্যারাক স্কোয়ারের চারিদিকে ভিতর দিয়ে তৈরি হওয়া জগিং ট্র্যাকে প্রাতঃভ্রমণ কিংবা সান্ধ্য ভ্রমণ করেন। এ ছাড়াও প্রতিদিন বহু মানুষ জড় হন তাঁদের গর্বের মাঠ ব্যারাক স্কোয়ারে। আর সেখানে নিজেদের পুলিশ প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে মাঠে উপস্থিত লোকজনকে হুমকি দেওয়া, লাঠি দেখিয়ে ভয় দেখানো, টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এমনকি মোবাইলে ছবি তোলার অভিযোগও উঠেছে। মাঠে উপস্থিত এক দল যুবক তাদের আটক করে বৃহস্পতিবার রাতেই বহরমপুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যারাক স্কোয়ারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শহরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মাঠের চারিদিকে প্রশাসনের কর্তাদের আবাস। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দু’জন মদ্যপ যুবক লাঠি দেখিয়ে মাঠে বসা লোকজনকে ভয় দেখাচ্ছে, টাকা চাইছে তা কী করে হতে পারে? এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যদি ওরা শাসায়, তবে অন্য নির্জন জায়গায় কী হতে পারে তা অনুমান করা যায়। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই দু’জন মাঠে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ঘোরাফেরা করছিল। শুক্রবার ব্যক্তিগত বন্ডে থানা থেকে তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে।
ব্যারাক স্কোয়ারের নিরাপত্তায় নজর দিতে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ‘ব্যারাক স্কোয়ার মার্শাল’ হিসেবে ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের ভলিন্টিয়ারকে নিয়োগ করেছে। তাঁদের প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ব্যারাক স্কোয়ারে নজরদারি চালানোর কথা। অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটলে তাঁদের পুলিশ প্রশাসনকে খবর দেওয়ার কথা। এ ভাবে দু’জন মদ্যপ যুবক ব্যারাক স্কোয়ারের ভিতরে মদ্যপ অবস্থায় লোকজনকে হুমকি দিলেও ব্যারাক স্কোয়ার মার্শালরা কী করছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আর জি করের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে বহরমপুরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার পরে শহরে খুনও হয়েছে। প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ফের হুমকির কথায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মহিলা পুলিশের উইনার্স দল, পিঙ্ক পুলিশও কাজ করছে। সেই সঙ্গে পুলিশও নজরদারি চালায়। তাই ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়।
বহরমপুরের মহকুমাশাসক শুভঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা আমার নজরে আসেনি। তবে সেখানে সিভিল ডিফেন্সের ৮ জন ভলান্টিয়ারকে নামনো হয়েছে। তাঁদের সেখানে নজরদজারির কথা। কী ঘটনা ঘটেছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাক স্কোয়ারে অনেক বয়স্ক, মহিলা, শিশুরা থাকেন। তাঁদের কোথাও যাতে অসুবিধা না হয়, সেখানে যাতে কেউ নেশা করতে না পারে, যেগুলি নিয়মে আটকায় সেগুলি দেখার জন্য জেলাশাসকের নির্দেশে ৮ জন সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাঠের এক দিকে সিসিটিভি লাগানো আছে। বাকি দিকগুলোতেও সিসিটিভি লাগানো হবে।