আফগানিস্তানে আটকে পড়েছেন যুবক। উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন বাড়ির লোক। কৃষ্ণ দাসের পরিবার। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন গীতা ঘোষ।
আফগানিস্তানে অশান্তির খবর আসছে অহরহ। বুক কাঁপছে ঘোষ পরিবারের। বাড়ির বড় ছেলে যে এখনও কাবুলেই।
“ছেলেটার সঙ্গে রোজ কথা তো হচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে যে সে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসবে তা ভেবে পাচ্ছি না” — বলে আঁচলে চোখ মোছেন কাবুলে আমেরিকান সেনা ছাউনিতে থাকা অশোক ঘোষের মা গীতা।
তাহেরপুরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা অশোক বছর চারেক আগে পাড়ি দিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। একটি বেসরকারি সংস্থা সেখানে আমেরিকান সেনাদের জন্য খাবার সরবরাহ করে। সেলসম্যানের কাজ ছেড়ে তাদেরই কাছে কাজ করতে গিয়েছেন অশোক। বাড়িতে বাবা-মা, ভাই ছাড়াও রয়েছেন স্ত্রী, ছয় বছরের ছেলে আর ১১ মাসের মেয়ে। ভাই এখন আবু ধাবিতে। ছয় মাস অন্তর ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতেন অশোক। জানুয়ারিতেও এসেছিলেন। ফিরে যান ফেব্রুয়ারি মাসে।
মা গীতা ঘোষ বলেন, “ছেলের সঙ্গে রোজই কথা হচ্ছে। বলছে তো ঠিক আছে। সেটা আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কি না জানি না। যে দিন থেকে টিভিতে দেখছি, সে দিন থেকেই সকলে চিন্তায় আছি।”
কাবুলে সেনাছাউনিতে অশোকের ঘরেই থাকেন তাহেরপুরের জে ব্লকের বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস। বাড়িতে আছেন স্ত্রী, মা আর আট বছরের মেয়ে। আগে প্লাস্টিকের সামগ্রী বিক্রির কাজ করতেন। বছর পাঁচেক আগে কাবুল পাড়ি দেন তিনি। তিনি আর অশোক ভিন্ন সংস্থার হয়ে খাবার জোগানের কাজে যুক্ত। তাঁরাও অপেক্ষায় আছেন, কবে কৃষ্ণ বাড়ি ফিরবেন। রোজই অবশ্য ফোনে কথা হচ্ছে। কৃষ্ণের স্ত্রী মৌমিতা বলেন, “ফোনে যোগাযোগ রাখছি আমরা। দুশ্চিন্তা তো রয়েছেই। জানুয়ারিতেই ও বাড়ি এসেছিল। ছুটি কাটিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে গেল। এর মধ্যে এত কিছু হয়ে যাবে কে জানত? ওর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, তাহেরপুরের আরও অনেকেই কর্মসূত্রে আছেন আফগানিস্তানে। তাঁদের তালিকা তৈরি হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাহেরপুরে যান রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এখানকার পাঁচ জন কাবুলে রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রককেও যাবতীয় তথ্য দিয়েছি, যাতে তাঁদের দ্রুত ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়।”
সন্ধ্যায় কাবুল থেকে ফোনে কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমি আর অশোক এক সঙ্গেই আছি। আমাদের জানানো হয়েছে, রাতে বাস পাঠিয়ে আমাদের বিমানবন্দরের কাছে কোনও লজে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পর হয়তো বিমান ধরতে পারব।”