প্রাক্তনের পর বর্তমান। নবদ্বীপ বিজেপির উত্তর মণ্ডলের প্রাক্তন সভাপতি অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চার দিনের মাথায় বিজেপির নবদ্বীপ দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি শশধর দেবনাথ পদত্যাগ করলেন। তাঁদের সঙ্গেই পদত্যাগ করলেন দক্ষিণ মণ্ডলের মহিলা মোর্চা, কিষান মোর্চা, যুব মোর্চা ও সংখ্যালঘু মোর্চার অধিকাংশ পদাধিকারী। এঁরা সকলেই শশধর নন্দীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় পুরসভা ভোটের আগে জেলায় ধাক্কা খেল বিজেপি।
বিজেপির নবদ্বীপ দক্ষিণ মণ্ডলের মূল কমিটির ১৫ জন সদস্যের মধ্যে সভাপতি শশধর নন্দী-সহ ১২ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। শুধু দু’জন সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করেননি। একই সঙ্গে নবদ্বীপ দক্ষিণ মণ্ডল যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদক আকাশ তালুকদারের নেতৃত্বে অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। দক্ষিণ মণ্ডল মহিলা মোর্চার দুই সাধারণ সম্পাদক বর্ষা ভট্টাচার্য এবং মানসী পাল-সহ অন্য সদস্যেরা পদত্যাগ করেছেন। মহিলা মোর্চার সভাপতি বিধানসভা নির্বাচনের পরেই বসে গিয়েছিলেন। কিষান মোর্চার সভাপতি দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়, এসসি মোর্চার সভাপতি অভিষেক সাহা, ওবিসি মোর্চার সভাপতি রাজু রাঢ়ী-সহ সংশ্লিষ্ট কমিটি গুলির বেশির ভাগ সদস্যই বুধবার পদত্যাগ করেছেন।
কিন্তু এই গণ পদত্যাগের সঙ্গে তাঁরা কি বিজেপির সঙ্গেও সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিলেন?
নবদ্বীপ শহরে বিজেপির দক্ষিণাঞ্চলের নেতা তথা দক্ষ সংগঠক শশধর নন্দী বলেন, “এখন আমরা কোনও দলের নই। বিজেপির যাবতীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালাম। এখন সাধারণ মানুষ হিসাবে মানুষের জন্য কাজ করব।”
কেন বিজেপি ছাড়তে হল? শশধর বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে বারে-বারে বলেও সুরাহা হয়নি। তাই আমাদের মনে হয়েছে, পদ আঁকড়ে বসে থাকার দরকার নেই।” এর পাল্টা বিজেপির নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক কমল রায় বলেন, “ সব মান অভিমানের ব্যাপার হয়েই থাকে। ওরা অভিমান করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব মিটে যাবে।”
কিন্তু পদত্যাগী নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, বিজেপিতে সর্বক্ষণ দলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলা কর্মীরা অপমানিত ও অসম্মানিত হয়ে চলেছেন। শশধর বাবু বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় বিধানসভার প্রার্থী ঘোষণার পর যে ধরনের বিরোধিতা, অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন হয়েছিল আমরা সেই পথে যাইনি। কিন্তু দলের মধ্যে আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু ফল হয়নি। যার পরিণতিতে বিপুল ভোটে বিজেপির পরাজয় হয়েছে। তবে যেহেতু দল প্রার্থী ঠিক করেছে তাই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
পদত্যাগীদের অভিযোগ, এখনও বিভিন্ন সময়ে কাজ করতে গেলেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘সামনে পুরভোট। সেখানে স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে লড়তে হয় এবং পুরভোট অনেকটা ব্যক্তিনির্ভর হয়। মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে না পারলে এই ধরনের ভোটে জয়লাভ করা খুব কঠিন। বিজেপি যে ভাবে চলছে তাতে সেই ভাবে কাজ করার সুযোগ নেই।’’