Amrita Roy

জেলা সভাপতির ছবিতে কালি, গলায় জুতোর মালা! কৃষ্ণনগরে বিজেপি অফিস ভাঙলেন দলীয় কর্মীরাই

নির্বাচনী তহবিলের অর্থ তছরুপ, তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত-সহ একাধিক অভিযোগে নদিয়া (উত্তর) জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতির অপসারণ চেয়ে শনিবার বিক্ষোভ দেখান কর্মীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ১৯:২৫
বিজেপির পার্টি অফিসে বিক্ষোভ কর্মীদের।

বিজেপির পার্টি অফিসে বিক্ষোভ কর্মীদের। — নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে অশান্তি। জেলা বিজেপি কার্যালয় ভাঙচুর একদল বিজেপি কর্মীর। জেলা সভাপতির ছবিতে জুতোর মালা পরিয়ে বিক্ষোভ, কালি লেপে দেওয়া হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য নেতার ছবিতেও। শেষে পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন ক্ষুব্ধ কর্মীরা। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস।

Advertisement

নির্বাচনী তহবিলের অর্থ তছরুপ, তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত-সহ একাধিক অভিযোগে নদিয়া (উত্তর) জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতির অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি কর্মীরা। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি পরিস্থিতি। তাঁদের অভিযোগ, দিল্লির পাঠানো নির্বাচনী তহবিলের বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন জেলা বিজেপি সভাপতি ও রাজ্য নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। বিক্ষোভরত বিজেপি কর্মীদের আরও অভিযোগ যে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে আঁতাঁত করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বিজেপি প্রার্থী অমৃতাকে। এই সমস্ত অভিযোগেই শনিবার ধুন্ধুমারকাণ্ড চলল কৃষ্ণনগরে। জেলা সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য নেতার ছবিতে কালি লেপে ও জুতোর মালা পরিয়ে বিক্ষোভ দেখান জেলা বিজেপির কর্মীরা।

বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মী আশিস তরফদার বলেন, ‘‘প্রার্থী অমৃতা রায় জানাচ্ছেন, তাঁকে ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করিয়ে জেলা সভাপতি টাকা নয়ছয় করেছেন। আমরা নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে দেওয়াল লিখেছি। মিথ্যে মামলায় জেলে খেটেছি। আর জেলা সভাপতি এবং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির পর্যবেক্ষক তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই কেন্দ্রে আমাদের হারিয়ে দিয়েছেন। এই সভাপতির দ্রুত অপসারণ চাই।’’ অভিযুক্ত জেলা সভাপতি অর্জুন বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোচ্ছিলাম। সব থেকে বেশি জনসভা হয়েছে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রেই। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আমরা মানুষকে ঠিকঠাক বোঝাতে পারিনি। ভোটে মেরুকরণ ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইভিএমেও কারচুপি করেছে তৃণমূল। তবে কর্মীদের অভিযোগ ঠিক নয়।’’

প্রসঙ্গত, প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে কৃষ্ণনগরে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের মহুয়া। আর মহুয়ার কাছে হেরেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ঘাড়ে পরাজয়ের দায় চাপিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বধূ অমৃতা রায়। এর পাশাপাশি অমৃতার ঘনিষ্ঠেরা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন যে, রানিমাকে ঠকিয়েছে বিজেপি! অমৃতার ছায়াসঙ্গী বলেছিলেন, ‘‘রানিমার ইমেজ, রাজবাড়ির নামে রানিমাকে রাস্তায় নামিয়েছে! রানিমাও ঘুরেছেন। কিন্তু এখানে বিজেপি নেতারা নিজেরা দুর্নীতি করেছেন। মোদীজি-শাহজির সভায় চুরি হয়েছে। বার বার হিসাব চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ হিসাব দেয়নি। সই করিয়ে চেকবুক নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পাশবইও রানিমার কাছে ছিল না।’’ অমৃতার ঘনিষ্ঠ মহলের আরও দাবি, টাকাপয়সা সরানোর বিষয়টি বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। রাজবধূর এক ছায়াসঙ্গী বলেন, ‘‘যারা টাকাপয়সা সরিয়েছে, তাদের নামের তালিকা বানানো হচ্ছে। বিষয়টি নেতৃত্বকে জানানো হবে।’’ তার পরেই এ নিয়ে বিতর্ক গতি পায়। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, শনিবার পার্টি অফিসে কর্মীদের গোলমাল এবং সভাপতির ছবিতে কালি লেপার ঘটনাও তারই ফলশ্রুতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement