রোগী নয়, অ্যাম্বুল্যান্সে আনা হয় আনাজ, মাংস

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামীণ এলাকা থেকে কম দামে আনাজ এবং মাছ-মাংস আনার জন্যই ওই অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করা হয়। বেআইনি এই কাজই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

Advertisement
সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩ ১০:০৫
Ambulance

—প্রতীকী চিত্র।

নীল বাতি জ্বালিয়ে, হুটার বাজিয়ে ছুটছে সাদিখাঁরদিয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালের নথিভুক্ত একটি অ্যাম্বুল্যান্স। সেখান থেকে তার গন্তব্য ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের রান্নাঘর। অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল ১০টা বা ১১টা নাগাদ ঝড়ের গতিতে আসা সেই অ্যাম্বুল্যান্সে অবশ্য রোগীর দেখা মেলে না। ভিতর থেকে গোটা কয়েক বস্তা বেরিয়ে আসে ডোমকল মহাকুমা হাসপাতালের রান্নাঘরে। তাতে থাকে আনাজ, মাছ, মাংস। সেগুলি কোনওরকমে নামিয়ে দিয়েই আবার অ্যাম্বুল্যান্স সোজা চলে যায় জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালে।

Advertisement

ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে বলা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক অনুত্তম সরকার ওরফে খোকনকে। কিন্তু তিনি কোনও কথায় কর্ণপাত করেন না। উল্টে নাকি তিনি হুমকি দেন, ‘তাঁর হাত অনেক লম্বা’। যদিও এ নিয়ে রবিবার অনুত্তমকে বেশ কয়েক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

বাইরে থেকে কোনও পথচারীর মনে হতে বাধ্য, এক গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বর থেকে অন্য গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাচ্ছে ওই অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু বাস্তবে ঠিকাদার সংস্থার পণ্য বহনের গাড়ি হয়ে দাঁড়িয়েছে নীলবাতি লাগানো ওই অ্যাম্বুল্যান্স।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামীণ এলাকা থেকে কম দামে আনাজ এবং মাছ-মাংস আনার জন্যই ওই অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করা হয়। বেআইনি এই কাজই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। শনিবার ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই নিয়মমাফিক আনাজ, মাংস নিয়ে আসা হয় ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে রান্নাঘরে।

সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দেখে গাড়ি ফেলে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান চালক। পরে অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে লেখা ফোন নম্বরে ফোন করা হলে অন্য প্রান্তের ব্যক্তি বারবারই জানান, এক জটিল রোগীকে নিয়ে তিনি ডোমকলের বাইরে আছেন। এখন রোগী নিয়ে যেতে পারবেন না। আর ঠিকাদার অনুত্তম সরকারের আত্মীয় তথা হাসপাতালের রান্নাঘরের কর্মী গোপাল সরকার বলেন, ‘‘ওটি আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স। আমাদের মালপত্র নিয়ে আসে। এতে অসুবিধা কী আছে?’’ কিন্তু সরকারি হাসপাতালে নথিভুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সের কাজ যে রোগী বহনই, তা তাঁকে বোঝাবে কে!

এই ঘটনা নিয়ে জলঙ্গির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) ওয়াসিম রেজা বলেন, ‘‘আমরা ওই অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক অনুত্তম সরকারকে বিষয়টি নিয়ে অনেক বার সতর্ক করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। সোমবার সব অ্যাম্বুল্যান্স মালিক এবং কর্মীদের নিয়ে আমরা একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছি। এ বার আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ করব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement