পুজো মণ্ডপের সামনে। রানাঘাটে মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
কল্যাণী, বেথুয়াডহরির পর রানাঘাটের একটি পুজো কমিটি দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। ‘আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে অনুদান চাই না’— এই মর্মে রানাঘাটের মহকুমা শাসক ও রানাঘাট থানায় লিখিত জমা দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার মণ্ডপের সামনে সেঁটেও দেওয়া হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, ‘‘সরকারি অনুদানের টাকায় লেগে রয়েছে নিহত চিকিৎসক তরুণীর রক্ত। তাই ওই অনুদান আমরা নিতে পারব না।’’
পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই। রাজ্য সরকারের তরফে পুজো কমিটিগুলিকে এই বছর ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে রয়েছে রাজ্য। দিকে দিকে মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচির পাশাপাশি রোজই চলছে প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল। জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি পথে নেমেছেন জেলার সাধারণ নাগরিকেরাও।
এই পরিস্থিতিতে ওই পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদান নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ওই অনুদানের টাকায় ‘লেগে রয়েছে নিহত চিকিৎসক তরুণীর রক্ত’। তাই সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়েই তাঁদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন রানাঘাটের চারের পল্লি পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যেই ওই পুজো কমিটির তরফে রানাঘাটের মহকুমা শাসক ও রানাঘাট থানায় লিখিত আকারে অনুদান না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দেওয়া ওই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার উদ্যোক্তারা আবার পুজো কমিটির ফ্লেক্সে সেঁটে দিয়েছেন। এ বার প্রতিবাদের মাধ্যমে পুজো উদ্যোক্তারা ৭৩তম বর্ষের দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছেন।
২০১৬ সাল থেকে ওই পুজো কমিটি সরকারি অনুদান গ্রহণ করছিল। তবে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করায় আগামী দিনেও যে আর সরকারি অনুদান মিলবে না, সে আশঙ্কা মেনে নিয়েই একজোট হয়েছেন পাড়ার মহিলা-পুরুষেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘অনুদান নয়, চিকিৎসক হত্যার দ্রুত বিচার চাই।’’
মঙ্গলবার ক্লাব সম্পাদক দেবতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যখন অনুদান পেতাম না, তখনও পুজো করেছি। গত বছর অনুদান নিয়েছিলাম। কিন্তু এই বছর ক্লাবের সকল সদস্য মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোনও ভাবেই সরকারি অনুদান নেওয়া যাবে না। যে সরকার হাসপাতালে এক জন মহিলা চিকিৎসকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেই সরকারের অনুদান আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’’
স্থানীয় বাসিন্দা সুমিতা কীর্তনীয়া বলেন, ‘‘অনুদান ফিরিয়ে দেওয়াটাই আমাদের প্রতিবাদ। এতে আগামী দিনে অনুদান যদি না-ও মেলে, তাতেও ক্ষতি নেই। আগের মতো আমরা চাঁদা সংগ্রহ করে মায়ের পুজো চালিয়ে যাব।’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও কল্যাণী শহরের রথতলার ‘ইচ্ছে তাই মহিলা দুর্গাপুজো কমিটি’ পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্প্রতি নাকাশিপারার বেথুয়াডহরির টাউন ক্লাবও পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বার সেই তালিকাতেই যুক্ত হল রানাঘাটের চারের পল্লি।