টোটো করে বেরিয়েছে ‘ছেলেধরা’! নিখোঁজ শিশুর কাছে পুলিশ পৌঁছে জানাল আরও চার শিশুর নাম!

নদিয়ার করিমপুর থানা এলাকার ১০ বছরের আরিফ শেখের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩০
নিখোঁজ শিশুকে খুঁজে পেয়ে নড়েচড়ে বসল পুলিশ।

নিখোঁজ শিশুকে খুঁজে পেয়ে নড়েচড়ে বসল পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি যাওয়ার পথে কয়েক জন ‘কাকুর’ কথায় টোটোয় বসেছিল ১০ বছরের বালক। ওই টোটোতে ছিল আরও ৪ শিশু। তাদের খাবার খাইয়ে অচেতন করিয়ে কোথাও একটা পালিয়েছে সেই টোটো। কোনও রকম টোটো থেকে ঝাঁপ দিয়ে সে নিজে পালিয়েছে। নদিয়ার করিমপুর থানা এলাকার আরিফ শেখের এই অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত।

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ এক শিশুকে উদ্ধার করে তারা। চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্র নিখোঁজ বলে থানায় অভিযোগ করেছিল তার পরিবার। তাকে খুঁজে পেলেও শিশুটির বয়ান গুরুতর বলে মনে করছে জেলা পুলিশ মহল।

Advertisement

দোগাছি পাঠানপাড়া এলাকায় বাবার বাড়িতে থাকেন মানোয়ারা বিবি। শ্বশুরবাড়ি কেচুয়াডাঙা সাহা পাড়া এলাকায় স্বামী কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলে আরিফকে দেখতে না পেয়ে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাননি। এর পর বুধবার দুপুর ১১টা নাগাদ করিমপুর থানার দ্বারস্থ হন। এই নিখোঁজ ডায়েরির ২ ঘণ্টার মধ্যে করিমপুর পাঁচগাছি এলাকার এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ফোন করে জানান যে, বছর ১০-এর একটি ছেলেকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় কয়েক জন তাকে বসিয়ে রেখেছে। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে। কিন্তু কী ভাবে সেখানে গেল, কেন ঘুরছিল— এই সব প্রশ্নে ছেলেটির উত্তর পেয়ে চমকে যান তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, আরিফ বলে বুধবার ভোরে দাদুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে তার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। টোটো করে কিছু দূর যাওয়ার পর অন্য একটি টোটো থেকে তাকে ডাক দেন এক ব্যক্তি। সেই টোটোয় আরও ৪টি শিশু ছিল। সবাই মোটামুটি তারই বয়সি। ওই টোটোচালক এবং কয়েক জন তাদের খাবার খেতে দেয়। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই নাকি তাদের মধ্যে ৩ জন ঘুমিয়ে পড়ে। তখন আরিফ এবং আর একটি শিশু ভয় পেয়ে টোটো থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। আরিফ পালাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ওই শিশুটিকে ধরে ফেলে টোটোচালকরা। আরিফ চিৎকার শুরু করলে তাকে ফেলে রেখেই টোটোটি পালিয়ে যায়। এর পর স্থানীয়রা তাকে বসিয়ে রেখে পুলিশ খবর দেন।

ভরদুপুরে জনবহুল বাজার এলাকায় এই অপহরণের অভিযোগে স্বাভাবিক ভাবে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। করিমপুর থানার পক্ষ থেকে চারটি বিশেষ দল করিমপুর, হোগলবেড়িয়া, মুরুটিয়া, থানারপাড়া ইত্যাদি জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে। এখন আরিফের সঙ্গে কথা বলে ওই ব্যক্তি এবং শিশুদের সম্পর্কে তথ্য পেতে চাইছে পুলিশ।

আরিফের মা বলেন, ‘‘ছেলে মাঝেমধ্যেই একা একা আমার বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। কিন্তু অনেক ক্ষণ ওর খোঁজ না মেলায় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। আমরা কিছুই জানি না আরিফ যা বলছে তা তো ভয়ানক ব্যাপার!’’

এই ঘটনা প্রসঙ্গে তেহট্ট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভতোষ সরকার বলেন, ‘‘প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। শিশুটির বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি আছে। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা আছে। তবে আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement