Doctors' Safety

সব হাসপাতালে ‘প্যানিক বাটন’, মহিলা পুলিশকর্মী, ১০ দফা নির্দেশিকা-সহ স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি পন্থের

আরজি করের ঘটনার পর থেকে হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। এই আবহে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিলেন মুখ্যসচিব।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৬
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর রাজ্যের।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর রাজ্যের। —প্রতীকী চিত্র।

জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের বৈঠকের পরই হাসপাতালগুলির চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করল নবান্ন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসানো হবে ‘প্যানিক বাটন’। অভ্যন্তরীণ অভিযোগগ্রহণ কমিটি (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস্‌ কমিটি) এবং অন্য কমিটিগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে সচল রাখা হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তায় যাতে কোনও ভাবেই কোনও খামতি না থাকে, তা নিশ্চিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় ভাবে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হেল্পলাইন নম্বর দ্রুত চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব।

Advertisement

আরজি করের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। এই আবহেই সরকার পক্ষের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে বৈঠক হয়েছিল। এর পর বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক।

মাঝে মঙ্গলবার ছিল সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি। সেখানেও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছিল। ডাক্তারদের বিশ্রামকক্ষ, শৌচালয়, সিসি ক্যামেরা, অভ্যন্তরীণ অভিযোগগ্রহণ কমিটি-সহ একাধিক দাবির কথা জানানো হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। পরে বুধে নবান্নের বৈঠকেও জুনিয়র ডাক্তারেরা তুলে ধরেছিলেন তাঁদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিদাওয়া। তালিকায় ছিল এই দাবিগুলিও। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি , আলোচনায় মৌখিক আশ্বাস পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বৈঠকের বিবরণী তৈরির সময় সেগুলি জায়গা পায়নি। সরকার পক্ষের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের স্নায়ুর লড়াইয়ের এই আবহেই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত দিকগুলি উন্নত করতে একাধিক সিদ্ধান্ত রাজ্যের।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

স্বাস্থ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী তথা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন রাখতে হবে। বিশেষ করে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা যাতে পর্যাপ্ত থাকে, সে দিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। রাতে প্রতিটি হাসপাতালে স্থানীয় থানার পুলিশের টহলদারি দলও রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়গুলি নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে সিকিউরিটি অডিটও করা হবে। এর দায়িত্বে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস তথা প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।

পাশাপাশি, প্রতিটি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারদের জন্য পৃথক বিশ্রামঘর ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালে পানীয় জলের বন্দোবস্ত যাতে ঠিকঠাক থাকে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে কতগুলি শয্যা ফাঁকা রয়েছে, সেই সংক্রান্ত প্রতি মুহূর্তের তথ্য কেন্দ্রীয় ভাবে রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে এই সংক্রান্ত একটি ডিসপ্লে বোর্ড রাখতে হবে। কোনও রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভাবে একটি ‘রেফারেল সিস্টেম’ দ্রুত চালু করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদ দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।

৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, শুধু নির্দেশ দেওয়াই নয়, হাসপাতালের সুরক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নে নজিরবিহীন পদক্ষেপে দরপত্রেই কাজ শেষের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থ ব্যবহার করেই হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা-সহ পুরুষ এবং মহিলা চিকিৎসকদের জন্য পৃথক বিশ্রাম কক্ষ, শৌচাগার নির্মাণ ইত্যাদি কাজ হবে। বসানো হবে সিসি ক্যামেরাও।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সামনে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে রাজ্যের সব হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর বন্দোবস্ত করছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া রাজ্য সরকারের এমন আশ্বাস দ্রুত কার্যকর করে দেখাতে চায় নবান্ন। তাই অক্টোবর মাস শুরু হওয়ার আগেই এই বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চাইছেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা।

কারণ ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিন থেকেই বাংলা জুড়ে শুরু হয়ে যাবে দুর্গাপুজো। ওই দিন মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সূচনা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, দেবীপক্ষ থেকেই রাজ্যের পুজো মণ্ডপগুলিতে উদ্বোধন শুরু হয়ে যায়। সেই উদ্বোধন পর্বে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শারদোৎসব শেষ হলেও রাজ্য প্রশাসনের ব্যস্ততা থাকে পরবর্তী উৎসবগুলিকে ঘিরে। তাই উৎসবের ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর নবান্ন।

গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্য অফিসারদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। কোন হাসপাতালে কী কী পরিকাঠামো প্রয়োজন, মূলত সে সব জানতে চাওয়া হয় আধিকারিকদের কাছে। কিছু দিন আগে থেকেই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ করা হলেও এই বৈঠকগুলির পর দরপত্র ডাকার ক্ষেত্রে গতি আসে। অধিকাংশ কাজই করা হচ্ছে পূর্ত দফতরের তরফে। সল্টলেক মহকুমা হাসপাতালে পুলিশ আউটপোস্টের ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশনের কাজ ১৪ দিনের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল-সহ বেশ কিছু হাসপাতালে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করতে সময় দেওয়া হয়েছে দু’সপ্তাহ। তবে বেশ কিছু হাসপাতালে এই সংক্রান্ত কাজ করতে বাড়তি কিছু সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, সেই বিষয়টি বিবেচনা করে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ-সহ একাধিক হাসপাতালে সিসিটিভি বসানোর কাজ শেষ করতে সময় দেওয়া হয়েছে ৩০ দিন। বিভিন্ন হাসপাতালে শৌচাগার-সহ পৃথক রেস্টরুম, ডিউটি রুম তৈরির জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ২১ দিন। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে ২১ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement