Sandeshkhali Incident

নোনা জল আটকে দেওয়া হবে, ফেরানো হবে চাষের জমিও, সন্দেশখালি গিয়ে আশ্বাস মন্ত্রী সুজিত-পার্থের

ধামাখালি থেকে পাত্রপাড়া হয়ে কাছারিপাড়ায় যান মন্ত্রী সুজিত-পার্থ। সেখানে পা রাখতেই তাঁদের ঘিরে ধরে কোন পরিস্থিতিতে, কী ভাবে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন— নানা অভিযোগ তুলে ধরেন স্থানীয়রা।

Advertisement
সারমিন বেগম
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৮
সন্দেশখালির কাছারিপাড়ায় মন্ত্রী সুজিত এবং পার্থ। নিজস্ব চিত্র।

সন্দেশখালির কাছারিপাড়ায় মন্ত্রী সুজিত এবং পার্থ। নিজস্ব চিত্র।

কেউ কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কেউ পা ধরতে বাকি রাখলেন। নানা রকম অভিযোগের ডালি নিয়ে মন্ত্রী, বিধায়কদের সামনে ক্ষোভ, অভিযোগ উগরে দিলেন স্থানীয়েরা। সন্দেশখালিতে উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে সেখানে হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু, পার্থ ভৌমিক এবং সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। একের পর এক অভিযোগ শোনেন তাঁরা। শুধু তাই-ই নয়, সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

তাঁরা প্রথমে ধামাখালিতে যান। সেখান থেকে টোটো নিয়ে পাত্রপাড়া হয়ে কাছারিপাড়ায় যান সুজিতরা। সেখানে পা রাখতেই মন্ত্রী-বিধায়কদের ঘিরে ধরে কোন পরিস্থিতিতে, কী ভাবে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন— এমন নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। মন্ত্রী-বিধায়কদের দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আবার ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ মূলত তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের শাগরেদ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে। কী ভাবে একের পর এক চাষের জমিতে জোর করে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ে সুজিত-পার্থদের কাছে। সেই নোনা জল আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।

কাছারিপাড়ায় সুজিত-পার্থেরা যেতেই তাঁদের কাছে অভিযোগ জানানো হয় যে, রাস্তাঘাট ভাল নয়। সেগুলি ভেঙে পড়ে আছে। সারাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। পানীয় জলেরও খুব সমস্যা। এ ছাড়াও চায়ের জমি দখল করে ভেড়ি বানানোর মতো অভিযোগও জানানো হয়েছে। কাছারিপাড়ায় গিয়ে মন্ত্রীরা আশ্বাস দেন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তার জন্য তাঁরা সময়ও চেয়ে নেন গ্রামবাসীদের কাছ থেকে। মন্ত্রী সুজিত বলেন, “চাষের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যে সব জমিতে জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলিকে ঠিক করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সেচ দফতর সেই ব্যবস্থা করবে। ২০ দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “যে সব রাস্তা ভেঙে গিয়েছে সেগুলি ঠিক করে দেওয়া হবে। আপনারা শান্তিতে বসবাস করুন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাদের সঙ্গে আছেন।”

মন্ত্রীরা যখন আশ্বাস দিচ্ছিলেন তখন এক মহিলা গ্রামবাসী তাঁদের জানান, খুব অত্যাচার হয়েছে। কেউ কোনও দিন দেখতে আসেনি। তখন মন্ত্রী পার্থ বলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর পৌঁছতেই তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওঁরা যে আন্দোলন করছেন সেটা ঠিক। এটাও বলেছেন, ওঁরা আমার লোক। ওঁরা যা বলছেন, সেটা করো। দিদি সেই জন্যই আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন।” এর পরেই সুজিত এবং পার্থ কাছারিপাড়ার লোকজনের কাছ থেকে এক মাসের সময় চেয়ে নেন। তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, মন্ত্রীদের আশ্বাসে তাঁরা ভরসা করতে পারছেন না। তাঁদের যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে কী ভাবে তা পূরণ করবেন মন্ত্রীরা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

৭ নম্বর পালপাড়াতেও গিয়েছিলেন মন্ত্রীরা। সেখানেও চাষের জমি দখল করে নেওয়া। জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে। মূলত কী কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে, এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী পার্থকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘‘জমি দখল, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া, অবৈধ ভাবে স্লুইস গেট তৈরি কর জল আটকে দেওয়ার মতো অভিযোগ জমা পড়েছে।’’ অবৈধ নির্মাণগুলি ভেঙে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সেচ দফতর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শাহজাহান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা বলে সুজিত বলেন, ‘‘আমাদের দল কাউকে রেয়াত করে না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। আমাদের কাছে ইতিমধ্যে আড়াইশো অভিযোগ জমা পড়েছে। দেড়শোর কাছাকাছি অভিযোগের তদন্ত হয়ে গিয়েছে। একশোটি অভিযোগের সমাধান আমরা করেছি। জমি ফেরত দিয়েছি।’’ অন্য দিকে, বিধায়ক সুকুমার বলেন, ‘‘দলের প্রতি মানুষের কোনও ক্ষোভ নেই। কিছু প্রবাসী নেতার উপরে ক্ষোভ রয়েছে। উত্তম, শিবুদের কাছে গ্রামবাসীরা টাকা পায়। আমাদের দলের নেতারা চাঁদা তুলে সেই টাকা ফেরত দেব। অন্য দলগুলি সন্দেশখালিতে অশান্তি করছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement