Ration Distribution Case

রেশন বণ্টন মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার জ্যোতিপ্রিয়, ‘ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম’, বললেন মন্ত্রী

রেশন বণ্টন মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সল্টলেকের বিসি ব্লকে তাঁর দু’টি বাড়িতে টানা তল্লাশি চলে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:১৫

—ফাইল চিত্র।

রেশন বণ্টন মামলায় গ্রেফতার রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে গ্রেফতার করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইডি সূত্রে খবর, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। রেশন বণ্টন মামলায় এই প্রথম কোনও মন্ত্রী গ্রেফতার হলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৩টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দফতরেও তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইডির কোনও আধিকারিক কোনও মন্তব্য করেননি। সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। শুধু এটুকুই বলে গেলাম। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে। তারা আমাকে শিকার করলেন।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ইডি। সল্টলেকের বিসি ব্লকে পাশাপাশি তাঁর দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) চলেছে তল্লাশি। ইডি সূত্রে খবর, রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পরেই নাম উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয়ের। জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে বৃহস্পতিবার তল্লাশি চলাকালীন বাইরে ভিড় করেন বহু মানুষ। তাঁদের সরাতে থানায় যোগাযোগ করেন ইডি আধিকারিকেরা। থানা থেকে পুলিশ কর্মীরা এসে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির ভিতরে ঢুকে কথা বলেন ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে। তার পরেই বাইরে বসানো হয় ব্যারিকেড। ইতিমধ্যে একতলার দরজা দিয়ে এক বার মুখ বার করতে দেখা যায় জ্যোতিপ্রিয়কে। দেখে বিধ্বস্ত মনে হয়। যদিও ইডির একটি সূত্র জানিয়েছেন, তিনি ঠিক আছেন।

জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির পাশাপাশি ওই সময়েই তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দে-র নাগেরবাজারের দু’টি ফ্ল্যাটেও পৌঁছে যায় ইডি। একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। সূত্রের খবর, দু’টি ফ্ল্যাটেই পালা করে অমিত থাকেন। তবে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল। অমিতকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর সন্ধান শুরু করেন ইডির আধিকারিকেরা। বেলা গড়ালে দেখা যায়, ইডির একটি দল পৌঁছেছে বেলেঘাটায় মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক অমিতের বন্ধু রনির বাড়িতেও। বিকেলে জ্যোতিপ্রিয়ের আপ্ত সহায়ক অমিত সপরিবারে বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রবীণা মা, স্ত্রী, এবং সন্তান।

এখানেই থামেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার বেনিয়াটোলায় জ্যোতিপ্রিয়ের পৈতৃক বাড়িতেও পৌঁছে গিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা। বেনিয়াটোলা লেনের এই বাড়িতে অবশ্য মন্ত্রী এখন থাকেন না। তাঁর আত্মীয়েরা থাকেন। ইডির আধিকারিকদের একটি দল সেই বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। মন্ত্রীর বাড়িতে এই তল্লাশি অভিযান নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি শুনেছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইডির গোয়েন্দারা তল্লাশির নামে চিনির কৌটো উল্টে দেয়। ঘিয়ের শিশি উল্টে দেয়। বাড়ির মেয়েদের কত রকম পোশাক-আশাক থাকে, তাদের ক’টা শাড়ি আছে, তারও তল্লাশি নেয়। এই সব আমরা সহ্য করব না। বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম) সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয়, তা হলে আমি বিজেপি এবং ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’

এ দিকে বৃহস্পতিবার সকালে যখন জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চলছে, তখনই ‘বিজয়া করতে’ মিষ্টি নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছে যান বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায় এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রঞ্জন পোদ্দার । তাঁদের ঢুকতে বাধা দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তার পরে তুলসীর অভিযোগ, “আমাদের ঐতিহ্য মেনেই গুরুজনের সঙ্গে বিজয়া করতে এসেছিলাম। কিন্তু এরা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানছে।”

মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকতে বাধা পেয়ে মূল ফটকের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকেন সব্যসাচী এবং অন্য দুই কাউন্সিলর। তাঁদের আসার কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বুঝিয়ে বলেনও সব্যসাচীরা। যদিও ভিতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। তার পরই নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় দুই কাউন্সিলরের। বাঙালির ঐতিহ্য মেনে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ইডি-তল্লাশির নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি সব্যসাচী। জানিয়েছেন, তিনি কেবল ‘বিজয়া করতে’ই এসেছিলেন। বিকেলে জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে যান বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল এবং তৃণমূল কাউন্সিলর মিনু দাস চক্রবর্তী। ভিড় সরাতে ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় থানা। এর কিছু পরেই ইডির হাতে গ্রেফতার হলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী।

Advertisement
আরও পড়ুন