Minakshi Mukherjee Sandeshkhali

মিনাক্ষী ছদ্মবেশে ঢুকলেন সন্দেশখালিতে, শাড়ির সঙ্গে মাথায় টানা হিজাব, পোশাক পরিকল্পনা কার?

বিয়েবাড়ি, বইমেলা, দুর্গাপুজোয় মিনাক্ষী শাড়ি পরেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মিনাক্ষীর পোশাক মানে চুড়িদার। কিন্তু ছদ্মবেশ ধরতেই শাড়ি পরে শনিবার সন্দেশখালি অভিযানে গিয়েছিলেন সিপিএম নেত্রী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫২
Minakshi Mukherjee reached at Sandeshkhali in disguise, who planned the outfit

সন্দেশখালির গ্রামে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

সাঁইবাড়ি মামলার সময়ে বহু জায়গায় গালে দাড়ি লাগিয়ে লাগিয়ে শিখ সেজে যেতেন অধুনাপ্রয়াত সিপিএম নেতা নিরুপম সেন। ছদ্মনামও ছিল তাঁর— হরিদাস। যে নাম রেখেছিলেন আর এক অধুনাপ্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী।

Advertisement

জরুরি অবস্থার সময়ে নাকি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শাড়ি পরে, ঘোমটা টেনে বাগবাজারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দলের চিঠি বিলি করতেন।

সিঙ্গুরে ১৪৪ ধারা জারি থাকাকালীন আদুল গায়ে, গামছা পরে সেখানে ঢুকেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা, অধুনা জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

জটায়ু যে ‘ছদ্‌মবেশ’-এর কথা ‘সোনার কেল্লা’য় বলেছিলেন, বাংলার রাজনীতিতে তা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। শনিবার তা আরও এক বার দেখালেন সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সন্দেশখালিতে পৌঁছলেন মিনাক্ষী-সহ সিপিএমের যুব নেতানেত্রীরা। গেলেন সিপিএম নেতারাও। গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। কথা বললেন। গিয়েছিলেন গ্রেফতার-হওয়া প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের বাড়িতেও। দুপুর দেড়টার পর যখন মিনাক্ষীদের পুলিশ আটকায়, তত ক্ষণে বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ফেলেছেন মিনাক্ষীরা। উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও সফল করে ফেলেছেন। সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি দেখে উচ্ছ্বসিত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারাও।

কিন্তু নেপথ্যে কে? কার পোশাক পরিকল্পনা? কী ভাবে ছদ্মবেশে সন্দেশখালিতে পৌঁছে গেলেন মিনাক্ষীরা?

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দিন কয়েক আগে মিনাক্ষী এবং যুব সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহাকে ডেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমি তোমাদের সন্দেশখালিতে দেখতে চাই। ধামাখালিতে আটকে পড়লে হবে না। সন্দেশখালিতেই পৌঁছতে হবে!’’ এ-ও জানা গিয়েছে, মিনাক্ষীদের ‘গেরিলা কায়দা’ শেখাতে সেলিম নিজের কথা উল্লেখ করে ‘ভোকাল টনিক’ দিয়েছিলেন। সেলিম তাঁদের বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি ঘটনার পরের দিন বাইকে চড়ে বগটুইয়ে যেতে পারি, তোমরা কেন পারবে না?’’ শুক্রবার মৌলালিতে ছিল সিপিএমের যুব সংগঠনের লোকসভা নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মশালা। সেই কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত পরিকল্পনার নীল নকশা তৈরি হয়। মিনাক্ষী, ধ্রুব, পারমিতা ঘোষ চৌধুরী, অভি দেবরা (জেলা সম্পাদক) ছিলেন সেই বৈঠকে। সেখানেই ঠিক হয়, আলাদা আলাদা ভাবে সকলে যাবেন।

বিয়েবাড়ি, বইমেলা, দুর্গাপুজো হলে মিনাক্ষী শাড়ি পরেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মিনাক্ষীর পোশাক মানে চুড়িদার। ‘পালাজো’ ধরনের। গলায় ওড়না। পায়ে ফিতে-বাঁধা জুতো। কিন্তু ছদ্মবেশ ধরতেই শাড়ি পরে শনিবার সন্দেশখালি গেলেন মিনাক্ষী। ঘুরলেন গ্রামে গ্রামে।

মিনাক্ষী যে হেতু পরিচিত মুখ, তাই তাঁকে পুলিশ চিনে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল সেলিমদের। সে কথা মাথায় রেখেই বলা হয়, শাড়ি পরে, মাথায় হিজাব টেনে যেতে। তাই করেন মিনাক্ষী। শনিবার সন্দেশখালির গ্রামের রাস্তাতেও মিনাক্ষী যখন হেঁটেছেন, দেখা গিয়েছে হিজাব শুধু মাথা নয়, মুখও ঢেকেছে তাঁর। ধ্রুব সাধারণত পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন। শনিবার তাঁকে দেখা গিয়েছে ট্রাউজ়ার্স-টি শার্টে। গায়ে দেওয়ার হালকা চাদর কখনও কখনও লুঙ্গির মতো করেও ট্রাউজার্সের উপর পরে নিয়েছিলেন তিনি।

শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি যেমন ঢাকঢোল পিটিয়ে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে হইচই পাকিয়েছে, আমরা চেয়েছিলাম, আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে যেন তা না হয়। ওরা যাতে গ্রামে পৌঁছতে পারে। কথা বলতে পারে।’’ সূত্রের খবর, দুর্বল হলেও সন্দেশখালির উত্তপ্ত এলাকায় এখনও অনেক সিপিএমের পার্টি সদস্য রয়েছেন। তাঁরাও চেয়েছিলেন মিনাক্ষী যাতে গ্রামে পৌঁছন। বস্তুত, সিপিএমও হয়তো বুঝতে পারছে, সরকার বিরোধী যে ‘আখ্যান’ তৈরি হচ্ছে সন্দেশখালিতে, তাতে বিরোধী পরিসরে ধারাবাহিক ভাবে দাগ কেটে যাচ্ছে বিজেপিই। বামেরা সেখানে খুব একটা ‘উজ্জ্বল’ নয়। অনেকের মতে, সিপিএম হয়তো এ-ও বুঝতে পারছে, বৃন্দা কারাটদের সন্দেশখালিতে পাঠিয়ে ‘ঔপচারিকতা’ হতে পারে, কিন্তু আশু উদ্দেশ্য সফল হবে না। সে কারণেই মিনাক্ষীদের পাঠাতে চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। এর আগেও এক দিন মিনাক্ষীরা সন্দেশখালি অভিযানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে দিন তাঁদের ধামাখালি থেকেই ফিরতে হয়েছিল। তবে শনিবার কালিন্দী পার করে সন্দেশখালির গ্রামে পৌঁছে যান তাঁরা।

আরও পড়ুন
Advertisement