আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের তথ্য জেনে নয়া অভিযোগ উপপ্রধান স্ত্রী সুরাইয়া পরভিনের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মন্দারমণির হোটেলে তৃণমূল নেতার মৃত্যুর চার দিনের মাথায় ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু ওই রিপোর্ট দেখে পুলিশের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল মৃত আবুল নাসারের পরিবার। উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা মৃতের স্ত্রী সুরাইয়া পরভিনের অভিযোগ, পুলিশ টাকা নিয়ে মূল অভিযুক্তদের আড়াল করছে। খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসাবে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। সব কথা জানিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। যদিও তৃণমূল উপপ্রধানের দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
শনিবার সকালে মন্দারমণির একটি হোটেলের ঘর থেকে আমডাঙার তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হন তাঁর বান্ধবী এবং বন্ধু। তাঁরা এখন পুলিশের হেফাজতে। মঙ্গলবার রাতে দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর। কিন্তু মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, ‘অনেক কিছু’ আড়াল করছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘‘ধৃত যুবতীর মামা এক বার-ডান্সারকে (মন্দারমণির হোটেলে আবুলের ধৃত বন্ধু যাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দেন) মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন।’’ মন্দারমণি থানার ওসির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করে সুরাইয়া বলেন, ‘‘আবুল মারা যাওয়ার পর প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতানোর সুবিধা হয়ে গিয়েছে ‘মামু’র। মন্দারমণি থানার ওসি তার একটা অংশের টাকা পাবেন বলে ‘ডিল’ হয়েছে। তাই ওঁকে (ধৃত যুবতীর মামা) গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বার বার অনুরোধ করা হলেও সেই তৃণমূল নেতার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করছে না পুলিশ।’’
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে তৃণমূল নেতার সঙ্গে বান্ধবীর মামার জমি ব্যবসার কথা। জানা গিয়েছে, সোদপুর এলাকায় কেনা একটি জমি নিয়ে আবুল এবং তাঁর বান্ধবীর মামার ঝামেলা হয়েছিল। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা এবং ধৃত বন্ধু ও বান্ধবীর ‘ত্রিকোণ সম্পর্কের’ জটিলতা ছিল কি না, তা-ও খুঁজে দেখা হচ্ছে। এখন সুরাইয়ার অভিযোগ, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পিছনে মামা-ভাগ্নির ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু পুলিশের তদন্তে তিনি খুশি নন। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছি। গোটা তদন্তপ্রক্রিয়ার কথা জানিয়ে মন্দারমণি থানার ওসিকে সরানোর দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবি, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে ওই ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।’’ এখানেই থামেননি আমডাঙার আদাহাটা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া। তাঁর সংযোজন, ‘‘কত টাকার বিনিময়ে গোটা পরিকল্পনার অংশ হলেন ওসি, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে। আমার স্বামীকে খুনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের খুঁজে বার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর আরও অভিযোগ, স্বামীর দেহ উদ্ধারের পর থেকে তারা আত্মহত্যার তত্ত্বের উপর জোর দিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগেই কেন আত্মহত্যার কথা মেনে নিতে বলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এফআইআর দায়েরের সময় সুরাইয়ার শাশুড়ি তারুনা বিবিকে প্রভাবিত করা হয় বলেও অভিযোগ। সুরাইয়া বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মন্দারমণি থানার ওসিকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি আমরা।’’
বৌমার কথার সূত্র ধরে মৃত আবুলের মা বলেন, ‘‘আমাকে দিয়ে ঝটপট করে কতগুলো কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে যে, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। ওসিকে আমাদের বক্তব্য বলার চেষ্টা করলেও উনি শুনতে চাননি। আমাদের হোটেলঘরের সিসিটিভি ফুটেজও দেখতে দেওয়া হয়নি। টাকার বিনিময়ে উনি এ সব করেছেন।’’
মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী এবং মায়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকেরা। তদন্তকারী দলের অন্যতম সদস্য পূর্ব মেদিনীপুর ডিএসপি (ডিএনটি) আবনুর হোসেন বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত রিপোর্টে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যার পক্ষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত চলছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’