সৌমেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
দিলীপ ঘোষের হাত ধরে একদা মেদিনীপুরে শক্তি বাড়িয়েছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে মেদিনীপুর লোকসভা থেকে দিলীপ যখন জিতলেন, তখন মেদিনীপুর বিধানসভা তাঁকে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের লিড দিয়েছিল। কিন্তু তারপর ক্রমান্বয়ে এই বিধানসভায় শক্তিক্ষয় হয়েছে বিজেপির। এ বার উপনির্বাচনেও নুইয়ে পড়েছে পদ্ম।
বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরোধ নিয়ে জল্পনা রয়েছে। রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ এখন অতীত। ফলে, এ বার উপনির্বাচনেও রাশ ছিল শুভেন্দুর। তাঁর ভাই, তথা কাঁথির দলীয় সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীকে মেদিনীপুরের উপনির্বাচনে এ বার ইনচার্জ নিযুক্ত করেছিল বিজেপি। বস্তুত কাঁথি তথা পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে এই প্রথম রাজনৈতিক দায়িত্ব পেয়েছিলেন সৌমেন্দু। তবে শেষরক্ষা হল না।
বিদায়ী বিধায়ক জুন মালিয়া এ বার মেদিনীপুর লোকসভা থেকে জিতে তৃণমূল সাংসদ হয়েছেন। তাই উপনির্বাচনের মুখে পড়ে মেদিনীপুর। এই বিধানসভা কেন্দ্র এই প্রথম উপনির্বাচনের মুখোমুখি হল। সেখানে তৃণমূলের সুজয় হাজরার কাছে ৩৩ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়।
দাদা শুভেন্দুর মতোই কাঁথিতে ছাত্র রাজনীতি থেকে উত্থান সৌমেন্দুর। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে ছাত্র সংসদের দায়িত্ব সামলেছেন। তারপর পুর প্রতিনিধি এবং কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান হন। তখন তিনি তৃণমূলে। তারপর দল বদলে দাদার পথেই বিজেপিতে এসেছেন সৌমেন্দু। তবে বিধায়ক না হয়েই সরাসরি সাংসদ হয়েছেন কাঁথি লোকসভা থেকেই। তার কয়েক মাসের ব্যবধানেই পাশের জেলায় মেদিনীপুর বিধানসভায় উপনির্বাচনে ‘ইনচার্জে’র দায়িত্ব পান সৌমেন্দু। একাধিকবার মেদিনীপুরে গিয়ে দলীয় বৈঠক করেন। ছিলেন প্রচারে।
বস্তুত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে সামনে রেখেই একদা দিলীপ ঘোষের ‘গড়’ মেদিনীপুরে উপনির্বাচনে বিজেপি লড়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, অধিকারী দাদা-ভাইয়ের যুগলবন্দিতে দাগ কাটতে পারবে বিজেপি। কিন্তু শহর কিংবা গ্রাম, কোথাওই পদ্ম ফোটেনি। ফলে, গেরুয়া শিবিরের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কাঁথির বাইরে সৌমেন্দুর প্রভাব কোথায়! কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূলও। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘কোন দল, কাকে, কোথায় ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে মেদিনীপুর উপনির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমরাও প্রমাণ করে দেব এই জেলা কোনও পরিবারের নয়, তৃণমূলের পাশে রয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা নিজেদের অবিভক্ত মেদিনীপুরের রাজনীতির উত্তরাধিকারী বলে বেড়ান, তাঁরা এ বার কী বলবেন?’’
এ বিষয়ে সৌমেন্দুর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজেরও জবাব মেলেনি। তবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘মেদিনীপুরে একটাও বুথে পোলিং এজেন্ট বসতে দেয়নি পুলিশ। হাতে একটা বছর সময় আছে। নির্বাচনমুখী সংগঠন আর আন্দোলনমুখী
মোর্চা চাই।’’