জাতীয় সড়কে ফেকো মোড় অবরোধ আদিবাসী সংগঠনের। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটনের ভরা মরসুমে একটি আদিবাসী সংগঠনের ডাকা বন্ধের প্রভাব পড়ল ঝাড়গ্রাম জেলায়। সমস্যায় পড়লেন পর্যটকেরা। অনেকেই এদিন ঝুঁকি নিয়ে বেলপাহাড়ি বেড়াতে যেতে চাননি। বেসরকারি বাসও চলেনি বললেই চলে। তবে সরকারি বাস চলেছে। টাটা-খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। ভিড় ছিল জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কেও। সেখানে এদিন ২৩৬৫ জন দর্শক এসেছিলেন। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ পর্যটক। টিকিট বিক্রি বাবদ সেখানে আয় হয়েছে ৫১ হাজার ৯০০ টাকা।
‘সারনা ধরম কোড’ চালুর দাবিতে সালখান মুর্মুর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান এদিন ১২ ঘন্টা ভারত বন্ধ ও রেল, রোড চাক্কা জ্যামের ডাক দিয়েছিল। সকাল থেকেই বেলিয়াবেড়ার ফোঁকো এলাকায় গোপীবল্লভপুরগামী রাস্তায় রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন ওই আদিবাসী সংগঠনটির লোকজন। বেলপাহাড়িতে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। তবে খাবার দোকান খোলা ছিল। বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ জানান, এদিন সকালে বেশ কিছু পর্যটক ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়িতে বেলপাহাড়িতে পৌঁছে বন্ধের আবহাওয়া দেখে ফিরে যান। বিধান বলছেন, ‘‘কিছু পর্যটক বেড়িয়ে স্থানীয় হোটেলে খাওয়াদাওয়া সারেন। বর্ষশেষ হিসেবে এদিন যে পরিমাণ পর্যটক থাকার কথা ছিল, তা ছিল না।’’
কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক চিন্ময়ী রায় বলছেন, ‘‘এক সময় তো জঙ্গলমহলে দিনের পর দিন বন্ধ হতো। কয়েক দিন আগে মাওবাদীদের বন্ধ হয়েছে শুনে বেড়াতে যাব কি না তা নিয়েই দোলাচলে ছিলাম। ট্রেনে শুক্রবার রাতে ঝাড়গ্রাম পৌঁছে জানতে পারি শনিবার নাকি বন্ধ। তাই বেলপাহাড়ির দর্শনীয় জায়গাগুলিতে যাওয়ার ঝুঁকি নিইনি।’’ ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জেলার বেশিরভাগ এলাকায় অবশ্য এদিন দোকান-বাজার খোলা ছিল। একাংশ পর্যটক এদিন বেড়াতেও বেরিয়েছিলেন। ঝাড়গ্রামের একটি হোম স্টে-র কর্ত্রী দেবযানী কর্মকার বলছেন, ‘‘তিনটি গাড়িতে পর্যটকরা বেলপাহাড়িতে গিয়েছিলেন। ফেঁকোতে অবরোধ থাকায় এদিন কয়েকজন পর্যটক ঘুরপথে গোপীবল্লভপুরে যান।’’
এর আগে ২২ ডিসেম্বর গৈরিকীকরণের প্রতিবাদে ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। ওই দিনও একাংশ পর্যটক বেড়াতে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি। ওই দিন বেলপাহাড়িতে সর্বাত্মক বন্ধ হওয়ার কারণে হোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠন মিলিত ভাবে পর্যটকদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। সূত্রের খবর, শনিবারও তারা মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পর্যটকদের স্বার্থে বেলপাহাড়ির খাবার দোকান খোলা রেখেছিলেন। পর্যটন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ঝাড়গ্রাম জেলায় পর্যটনই মূল শিল্প। এখনও বন্ধের কথা শুনলেই শঙ্কিত হন পর্যটকরা। জরুরি পরিষেবার মতো পর্যটকদেরও বন্ধের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া উচিত। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে যে কোনও বন্ধের কথা শুনলেই পর্যটকরা ভয় পেয়ে যান। এদিন ইচ্ছুক পর্যটকরাই বেড়িয়েছেন।’’
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপকুমার পাল জানান, আদিবাসী সংগঠনটির লোকজন শুক্রবার রাতেই বাস কর্মীদের সতর্ক করে দেন। বন্ধে বাস চালাতে নিষেধ করেন। তাই শনিবার চালক ও কর্মীরা পথে বাস নামাতে রাজি হননি। তাঁর দাবি, ‘‘বাস কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘কোনও পর্যটক জেলার কোথাও গিয়ে আটকে বা সমস্যায় পড়েননি।’’ আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের জেলা সভাপতি সঞ্জয় হেমব্রম বলেন, ‘‘আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ফেঁকো চকে অবরোধ করেছি। ঝাড়গ্রাম জেলা-সহ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বন্ধের প্রভাব পড়েছে। জরুরি পরিষেবার গাড়ি যাতায়াতে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’’