শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন করল বিজেপি। তৃণমূলের দাবি, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়ে জয় সহজ করে দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের। আর এ নিয়ে শুরু হল নতুন চাপানউতর।
গত ৫ সেপ্টেম্বর স্থায়ী সমিতি গঠনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের এই অঞ্চলে। খেজুরি-২ বিডিও অফিসে বোমাবাজি, গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে। সেদিন সাংসদ শিশির অধিকারী সমিতি গঠনে অংশ নিতে এসে আক্রান্ত হন। বাড়ি ফেরার সময় তাঁর গাড়িতে ইট ছোড়ার অভিযোগে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। শেষমেশ কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে বুধবার কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে তমলুকে জেলাশাসকের অফিসে স্থায়ী সমিতি গঠনের ভোটপর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল।
ভোটপর্ব উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল তমলুকের নিমতৌড়ি এলাকায় অবস্থিত জেলাশাসকের কার্যালয়। ১৪৪ ধারা জারি হয় জেলাশাসক দফতরের ৫০০ মিটার এলাকায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এলাকায়। বেলা গড়াতেই একে একে জেলাশাসকের দফতরে আসেন খেজুরি-২ পঞ্চায়েত ১৫ জন সদস্য। যার মধ্যে ছিলেন তৃণমূলের আট এবং বিজেপির সাত সদস্য। এ ছাড়াও পঞ্চায়েতের প্রধান, বিধায়ক ও সাংসদ মিলিয়ে ২৪ জন ভোটদাতা হাজির হন। ভোটের ফলে দেখা গেল বিজেপির ঝুলিতেই গিয়েছে স্থায়ী সমিতি।
পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে পরিচিত খেজুরি-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বোমা-গুলির মতো একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন স্থানীয়রা। গত বিধানসভা ভোটের পরও সে আবহ জারি ছিল। পঞ্চায়েত ভোটেও সেই পরিবেশ বজায় ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৫টি আসনের মধ্যে ন’টি আসনে বিজেপি জয়লাভ করে. তৃণমূল পায় ছ’টি আসন। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের সময় আচমকা বিজেপির মণ্ডল সভাপতি এবং এক বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তার পর বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। কিন্তু স্থায়ী সমিতি গঠন নিয়ে চরম উত্তেজনা ছড়ায়। মুলতুবি হয়ে যায় ভোটপর্ব। পর হাই কোর্টে মামলা যায় বিজেপি। আদালতের নির্দেশ মতো বুধবার স্থায়ী সমিতি গঠন সম্পন্ন হয়েছে।
স্থায়ী সমিতি গঠনের পর তৃণমূল নেতা অসীম মণ্ডল বলেন, “ন’টি স্থায়ী সমিতি গঠনের সময় ২৪টি ভোটের মধ্যে বিজেপির তরফে ১৩টি এবং তৃণমূলের পক্ষে ১১টি ভোট পড়েছে।” এর পর অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, “আজ শিশির অধিকারী তৃণমূলের পরিবর্তে বিজেপিকে ভোট দেওয়াতেই তারা (বিজেপি) সহজে জয়ী হয়েছে।’’ কী ভাবে এই দাবি করছেন? তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘ওপেন ব্যালটে ভোট হয়েছে। তাই কে কাকে ভোট দিয়েছেন, আমরা সবটাই দেখেছি।’’ অসীম আরও জানান, যদি গোপন ব্যালটে ভোট হত তাহলে ক্রস ভোট হতে পারত। সেখানে বিজেপির অনেকেই তৃণমূলকে সমর্থন করতে চাইলেও ওপেন ব্যালটে ভোট হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
অন্য দিকে, সমিতি গঠনের ভোটপর্ব সেরে বেরিয়ে আসার সময় কাঁথির সাংসদ (খাতায় কলমে তৃণমূলের) শিশির অধিকারী বলেন, “আমার ভোট ডেভেলপমেন্টের (উন্নয়ন) পক্ষেই থাকবে।” তিনি তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে শিশিরের জবাব, “দলের তরফে কোনও হুইপ থাকলে আমাকে জানান। আমাকে দলের কোনও হুইপের বিষয়ে জানানো হয়নি। সুতরাং যারা উন্নয়ন করবে, তাদেরই আমি ভোটটা দিয়েছি।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির এ-ও বলেন, “কেউ ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভোট আশা করতেই পারেন। তাতে আমার কিছু এসে যায় না।’’