পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্মেলনের পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
জাতিসত্তার দাবিতে আয়োজন করা হচ্ছে জেলাস্তরের একটি অরাজনৈতিক সম্মেলন। কিন্তু আয়োজকদের মাথায় রয়েছেন গেরুয়া শিবিরের এক শীর্ষনেতা। সম্মেলনের ব্যানারে ননীর হাঁড়ি হাতে বালগোপালের ছবিও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের ওই সম্মেলন কি লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার 'গেরুয়া কৌশল'— শুরু হয়েছে জল্পনা।
আগামী ৫ নভেম্বর, রবিবার পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্মেলন হবে গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ির একটি অতিথিশালায়। ঝাড়গ্রাম ছাড়াও রাজ্যের অন্য জেলা থেকেও সদগোপ প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। সদগোপদের মূল দাবি, তাঁদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করতে হবে।
জাতিসত্তার দাবিকে সামনে রেখে এ রাজ্যে সদগোপ সমাজের আন্দোলন সংগঠিত করার দায়িত্বে রয়েছেন অবনী ঘোষ। অবনী বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বেও আছেন তিনি। যদিও অবনীর দাবি, সদগোপ সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আর সম্মেলনের প্রকাশিত ব্যানার-পোস্টারে ননীচোরা বালগোপালের ছবি প্রসঙ্গে অবনীর ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা শ্রীকৃষ্ণের উত্তরসূরি, যাদব বংশীয়। তাই সংগঠনের ব্যানার-পোস্টারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার ছবি রয়েছে।’’
অবনী জানাচ্ছেন, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশায় সদগোপরা ওবিসি (অনুসূচি-২) তালিকাভুক্ত। এ রাজ্যেও তাঁদেও ওবিসি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন হবে। সম্মেলনে পুরোদস্তুর কমিটি গড়ে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের আগে এমন পদক্ষেপ ইঙ্গিতবাহী। কারণ, কোনও সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রয়েছে। ফলে, এই পদক্ষেপ তৃণমূলকে চাপে রাখার কৌশল বলেই অনুমান। ১৯৯৪ সালে ওড়িশার রাজ্য সরকার সেখানকার বসবাসকারী সদগোপদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করে। সংযুক্ত বিহারের সদগোপরা আন্দোলন করার পর ২০০০ সালে বিহারেও সদগোপদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করা হয়। বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড আালাদা রাজ্য হয় ২০০০-এর নভেম্বরে। ২০০৪ সালে ঝাড়খণ্ডেও সদগোপদেরও ওবিসি (অনুসূচি-২) তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তিন রাজ্যের সিদ্ধান্তকে মান্যতাও দিয়েছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের দাবি, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার তুলনায় এ রাজ্যে সদগোপদের সংখ্যা অনেক বেশি, প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি। কিন্তু এখানে তাঁরা সর্বসাধারণ হওয়ায় বিশেষ সুযোগ সুবিধা পান না।
লোকসভা ভোটের আগে সদগোপদের এই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘এর আগে সদগোপ সম্প্রদায়ের এমন দাবির কথা আমরা শুনিনি। যে কোনও জাতি তার দাবির কথা সরকারকে জানাতেই পারে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে এমন দাবিটি কি আদৌ কোনও সম্প্রদায়ের নাকি গেরুয়া শিবিরের সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার!’’ অবনীর পাল্টা জবাব, ‘‘তৃণমূল সবেতেই রাজনীতি দেখে। আমাদের এই আন্দোলন অরাজনৈতিকভাবেই হবে।’’