শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে) এবং যোগী আদিত্যনাথ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
শুভেন্দু অধিকারীর মুখে আবার শোনা গেল যোগী আদিত্যনাথ মডেলের কথা। তবে এ বার আর ‘এনকাউন্টার’ প্রসঙ্গের কথা শোনা যায়নি বিরোধী দলনেতার মুখে। শনিবার বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জনসভা করেন শুভেন্দু। সেখানেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “যদি যোগী আদিত্যনাথের মতো সরকার চান, তা হলে আমাদের পাশে থাকুন।” মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের শাসনে উত্তরপ্রদেশে উন্নতির খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। এই প্রসঙ্গে এই রাজ্যের তুলনা টেনে, শাসক তৃণমূলকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু। উল্লেখ্য, প্রথমে পুলিশের তরফে খেজুরিতে সভা করার অনুমতি পায়নি বিজেপি। গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট জানায়, শনিবার সেখানে সভা করতে পারবেন শুভেন্দু। সে দিক থেকে দেখতে গেলে আদালতের রায়ে জয়ী হয়ে খেজুরিতে এ দিন ‘বিজয়’সভা করেন শুভেন্দু।
সভা থেকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন, “মিটিং করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় মঞ্চ বাঁধার পরেও মিটিং বন্ধ করা হয়েছে। আলিপুরে আমাদের মঞ্চ খুলে দেওয়া হল। আদালত থেকে অনুমতি নিতে হচ্ছে। তবু আমরা গণতান্ত্রিক পথেই মিটিং করছি। আজ খেজুরিতেও তাই করলাম।” বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মহিলাদের ২০০০ টাকা দেওয়া হবে বলে দাবি করে শুভেন্দু বলেন, “আমরা কর্মসংস্থান চাই, উন্নয়ন চাই। ৫০০ টাকায় কিছু হয় না। বিজেপি সরকারে এলে আমরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই ২০০০ টাকা করে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৪ অগস্ট) উত্তরপ্রদেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও ধর্ষকদের ‘প্রয়োজনে এনকাউন্টারের’ পক্ষে সওয়াল করছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু। উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়ি এবং তুফানগঞ্জে দু’জন নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় সরব হয় বিজেপি। সেই প্রসঙ্গেই সংবাদমাধ্যমের সামনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এ রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের মতো এক জন কড়া প্রশাসক দরকার। এই ধরনের অপরাধ যারা করছে, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। প্রয়োজনে এদের এনকাউন্টার করে দেওয়া উচিত।’’
ইতিমধ্যেই ঘৃণাভাষণের অভিযোগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে নালিশ জানাল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। এই আবহে এনকাউন্টার প্রসঙ্গ না তুললেও আদিত্যনাথ মডেলের কথা আবার উঠে আসে শুভেন্দুর কথায়। এই নিয়ে অবশ্য শুভেন্দুকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, “শুভেন্দুর যদি এতই যোগী আদিত্যনাথ মডেলকে ভাল লাগে, তবে বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে চলে যাচ্ছে না কেন?” এর আগে শুভেন্দুর ‘এনকাউন্টার তত্ত্বে’র জবাবে তৃণমূল পরিষদীয় দলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলছিলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীরা যতই এ রাজ্যকে যোগী রাজ্য করতে চান না কেন, এখানে যা হবে, তা আইনের ভিত্তিতেই হবে।’’
গত ১৯ অগস্ট পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে সভা করার কথা ছিল শুভেন্দুর। ১৪ অগস্ট সভা করতে চেয়ে অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। বিজেপির আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, সভার আগের দিন ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বলা হয়, পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে অশান্তি ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত। প্রশাসনকে মান্যতা দিয়ে সভার দিন পরিবর্তন করে আগামী ২৬ অগস্ট করা হয়। কিন্তু তাতে আপত্তি জানায় পুলিশ। শুভেন্দুর মামলায় হাই কোর্ট জানায়, সামান্য অশান্তি হলেই ১৪৪ ধারা করা যায় না। ২৬ অগস্ট খেজুরিতে শুভেন্দুকে সভা করার অনুমতি দেয় উচ্চ আদালত।