প্রয়াত ডঃ মনমোহন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
খবর পেয়েছিলেন বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই। প্রবীণ রাজনীতিবিদ শুক্রবার কাঁথির বাড়িতে বসে শোনাচ্ছিলেন তাঁর দেখা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কথা। দরাজ গলায় বললেন, ‘‘উনি প্রধানমন্ত্রী আর আমি ছিলাম প্রতিমন্ত্রী। উনি যোগ্য সম্মান দিতেন।’’
কাঁথির প্রাক্তন সাংসদ শিশির অধিকারী কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর পদ সামলেছেন ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কেন্দ্রে সে সময় দ্বিতীয় ইউপিএ-এর সরকার। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এসেছেন মনমোহন সিংহ। এ দিন কাঁথির ‘শান্তি কুঞ্জের’ বাড়িতে বসে ‘কর্মঠ’ মনমোহনের নানা স্মৃতি রোমন্থন করেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। জানালেন বিদেশ থেকে কোন অতিথি এলে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অফিসে পাঠিয়ে দিতেন, সেই কথা।
শিশির বলেন, ‘‘আমার গ্রামোন্নয়ন দফতরের অফিসে বিদেশি অতিথিদের পাঠাতেন উনি। তাঁদের আপ্যায়ন করার পাশাপাশি, সমস্ত রকম আলোচনা করে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট আবার আমাকে পাঠাতে হত ওঁর দফতরে।’’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বঙ্গোপসাগর উপকূল সংলগ্ন দেশগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে নেপালে যান শিশির। এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘কয়েকবার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে চেয়েছিলেন উনি। শেষে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা-সহ অন্য দেশগুলি নিয়ে একটা সম্মেলন হয়েছিল। আমি নেপালে তাতে যোগ দিতে গিয়েছিলাম।’’
কোলাঘাটে রূপনারায়ণের পুরনো সেতুর দু’দিকে যে দুটো নতুন সেতু হয়েছে, তা মনমোহন সিংহ না থাকলে কোনও দিনই হত না বলে দাবি শিশিরের। শিশির বলেন, ‘‘শুভেন্দু সে সময় তমলুকের সাংসদ। তিনি লোকসভায় প্রস্তাব রেখেছিলেন। আমিও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রেখেছিলাম। তাতে উনি সম্মতি দিয়েছিলেন।’’ কাঁথির প্রাক্তন সাংসদ জানান, মনমোহন সিংহ ব্যক্তিগত স্তরেও খোঁজখবর রাখতেন। তাঁর কোমরের সমস্যা জানতে পেরে এক চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে তিনি নিজেই ওই চিকিৎসকের কাছে দেখানোর ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ করিয়ে দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় ইউপিএস সরকারের জোট শরিক থেকে এক সময়ে সরে গিয়েছিল তৃণমূল। সঙ্গত কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় শিশিরকে। আপাতত তিনি গেরুয়া শিবিরে রয়েছেন। তবে এক সময়ের তাঁর ‘অভিভাবক’ মনমোহন সম্পর্কে শিশির বলছেন, ‘‘দেশ উজ্জ্বল নক্ষত্র হারাল। উনি খুব কাজের মানুষ ছিলেন।’’
একা শিশির নন, মনমোহনের প্রয়াণে স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন জেলার কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাও। দক্ষিণ কাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক শৈলজা দাস বলছেন, ‘‘২০০৯ সালে এআইসিসির সম্মেলন হচ্ছিল দিল্লিতে। সেখানে বাংলার প্রতিনিধি হিসাবে হাজির ছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। উনি আমাদের কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন।’’ ওই বছরই দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে মনমোহনের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি আনোয়ার আলি। আনোয়ার বলছেন, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বাংলার আইনজীবীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন মনমোহনজী। তার পরামর্শ মেনেই পরে কংগ্রেসে আরও সক্রিয় হয়েছিলাম।’’