Innovative Brains

চার খুদের ‘চলমান ব্লু টুথ স্পিকারে’ বিস্ময় স্কুলে

পড়ুয়াদের স্পিকার তৈরিতে প্রয়োজনের একটা তাগিদ ছিল। পড়ুয়ারা জানায়, বেশ কিছুদিন আগে স্কুলের ব্লু টুথ স্পিকারটি খারাপ হয়ে যায়।

Advertisement
কিংশুক গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩০
সৃষ্টির সামনে চার খুদে।

সৃষ্টির সামনে চার খুদে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বেলপাহাড়ি: তিন জন চতুর্থ শ্রেণির। একজন পঞ্চমের। চার ‘খুদে বিজ্ঞানী’ বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে বানিয়ে ফেলেছে ‘চলমান ব্লু টুথ স্পিকার’। স্কুলের পড়ুয়াদের কীর্তি দেখে বিস্মিত শিক্ষক শিক্ষিকারা। সেই সঙ্গে গর্বিতও তাঁরা।

Advertisement

পরিবেশ ও পারিবারিক ভাবেই প্রান্তিক চার খুদে। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা অঞ্চলের প্রত্যন্ত গুইয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা তারা। চার জন গুইয়াড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। মূলত নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানেরা পড়ে এই স্কুলে। এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির তাপস পাল, চতুর্থ শ্রেণির অনিমেষ গরাই, তারাপদ পাল ও শ্যামাপদ পাল মিলে বানিয়েছে ব্লু-টুথ স্পিকার। তাপসের বাবা টোটোচালক, অমিয়ের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তারাপদ ও শ্যামপদ দুই যমজ ভাইয়ের বাবার সাইকেল মেরামতের দোকান রয়েছে।

পড়ুয়াদের স্পিকার তৈরিতে প্রয়োজনের একটা তাগিদ ছিল। পড়ুয়ারা জানায়, বেশ কিছুদিন আগে স্কুলের ব্লু টুথ স্পিকারটি খারাপ হয়ে যায়। সেটি শহরে সারাতে পাঠানো হয়েছে। তখনই তাদের মনে ব্লু টুথ স্পিকার তৈরির ভাবনা আসে। তাপস জানায়, কালীপুজোর সময় অনুষ্ঠানে ও মণ্ডপে বড় স্পিকার বাজানো হয়। তার সার্কিট কেমন সেটা ভাল করে লক্ষ্য করেছিল তারা। এর পর সরঞ্জামের খোঁজ শুরু হয়। পাড়া পড়শিদের বাড়ি থেকে টিভির বাতিল ওভাল স্পিকার, দু’টি আট ইঞ্চির উফার, পিজো টুইটার জোগাড় করে। প্রয়োজন ছিল ব্লু-টুথ সার্কিট প্যানেল আর ব্যাটারি। পাড়াতুতো এক কাকাকে দিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করে তারা।

স্কুলে গিয়ে দেখা গেল খুদেদের ব্লু-টুথ স্পিকার। একটি চৌকো কাঠের পাঠাতনের তলায় তিনটি বল বিয়ারিং দিয়ে চাকা বানানো হয়েছে। যাতে সেটিকে রথের মতো টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের বাক্স কেটে তার ভিতর পিজো টুইটারটি বসানো। তার তলায় একটি জুতোর বাক্সের অর্ধেকটা কেটে মুখোমুখী বসানো দু’টি আট ইঞ্চির উফার। তার নীচে যুক্ত করা হয়েছে টিভির ওভাল স্পিকার। একদিকে ব্লু টুথ সার্কিট আর চার্জেবল ব্যাটারি বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্লু-টুথ স্পিকারটি। পরখ করে দেখা গেল। মোবাইল ও পেন ড্রাইভ যোগ করে গান শোনা যাচ্ছে। আবার মাইক্রো চিপ ঢোকালেও গান শোনা যাচ্ছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ শাহরূপ হোসেন বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে তাপস, অনিমেষরা ব্লু-টুথ স্পিকারটি স্কুলে এনে দেখায়। আমাদের মোবাইল ফোন সংযুক্ত করে দিব্যি তাতে গান শোনা যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ওদের কারও বাড়িতে স্মার্ট ফোন নেই। এমন কৌতূহলি মনই তো চাই!’’

শ্যামাপদ, তারাপদদের কথায়, ২৫ বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোবাইল ফোন যোগ করে স্কুলের স্পিকারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। স্কুলে প্রোজেক্টর নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই স্পিকার যোগ করে মোবাইল ফোনে পড়ুয়াদের নানা শিক্ষামূলক বিষয়ে দেখাতেন। তাতে মোবাইল ফোনের চেয়ে অনেক বেশি আওয়াজ শোনা যেত। সেই স্পিকার খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা কাজ চালানোর মতো স্পিকার তৈরি করেছে।

স্কুলের শিক্ষক নাসিরুদ্দিন মির্জা ও অপর্ণা মাহাতো বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা কথা শোনানো হয়। বরাবরই ওই চারজন ছাত্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরের গুইয়াড়া গ্রামের পড়ুয়াদের সৃষ্টির কথা জেনে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি সাউন্ড সিস্টেম দোকানের মালিক রাজকুমার অম বলছেন, ‘‘গভীর পর্যবেক্ষণ করে যে ভাবে প্রান্তিক গ্রামের খুদেরা এটি বানিয়েছে, ওদের কুর্নিশ!’’

আরও পড়ুন
Advertisement