উপলক্ষ রাম মন্দির উদ্বোধন, নেপথ্যে কি ভোট? তোড়জোড় জঙ্গলমহলের জেলাতেও
Ram Mandir

সংস্কৃত শিক্ষা সংস্কৃতি না অভিসন্ধি!

সংস্কৃত ভারতী প্রথমেই যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছে তা হল, দেবভাষাকে সাধারণের মুখের ভাষায় পরিণত করা। প্রথমে দশ দিনের সম্ভাষণ (কথোকথোপথন ) শিবির চলছে।

Advertisement
অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৯
দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন।

দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন। —নিজস্ব চিত্র।

রাম মন্দির নিয়ে প্রচার শুরু হবে একটু পরে। তবে ইতিমধ্যে ঘাটাল মহকুমা শুরু হয়েছে সংস্কৃত ভাষা শেখানোর চেষ্টা। সৌজন্যে ‘সংস্কৃত ভারতী’। এই ‘সংস্কৃত ভারতী’ নামক প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের বিচার পরিবারের সদস্য। সম্পূর্ণ নিখরচায় সংস্কৃত ভাষায় লেখাপড়া শেখাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি, পর্যায়ক্রমে নাকি ভিড়ও বাড়ছে এই ভাষা শিক্ষার ক্লাসে। যে ভিড়ের একটা বড় অংশ জুড়ে নাকি থাকছে তরুণ প্রজন্ম।

Advertisement

আগামী জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় নয়া রামমন্দিরের উদ্বোধন হওয়ার কথা। তার আগে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় রামমন্দির নিয়ে নানা ভাবে প্রচার শুরু হয়েছে। ঝাড়গ্রামে যেমন ছোট ছোট রামমন্দিরগুলিকে প্রচারের আলোয় আনার পরিকল্পনা চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় সঙ্ঘ এবং তার একাধিক শাখা সংগঠন রাম মন্দিরের প্রচার নিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ঘাটাল মহকুমায় এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই প্রচার শুরু না হলেও দ্রুতই সে কাজ আরম্ভ হবে বলে সঙ্ঘ সূত্রে খবর। তবে রাম মন্দির নিয়ে প্রচার শুরু না হলেও এখানে চলছে অন্য কাজ। সংস্কৃত ভাষায় সকলকে সাবলীল করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে ‘সংস্কৃত ভারতী’। এই মুহুর্তে ঘাটাল মহকুমায় তিন চার জায়গায় সাপ্তাহিক সংস্কৃত চর্চা চলছে। তার মধ্যে ঘাটাল নগর (ঘাটাল শহর) এবং দাসপুরের কেলেগাদা আর ধানখালে ওই চর্চা চলছে বলে খবর।চন্দ্রকোনাতে সংস্কৃতভারতীরই উদ্যোগে সংস্কৃত প্রচারে শিবির হয়েছে। তা ছাড়া দাসপুরেও সমানে চলছে ওই প্রচার।

সংস্কৃত ভারতী প্রথমেই যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছে তা হল, দেবভাষাকে সাধারণের মুখের ভাষায় পরিণত করা। প্রথমে দশ দিনের সম্ভাষণ (কথোকথোপথন ) শিবির চলছে। পর্যায়ক্রমে সেখানে প্রতিদিন উৎসাহীদের ভিড়ও বাড়ছে বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি। টানা দশদিন প্রতিদিন দু’ঘন্টা করে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলা শেখানো হচ্ছে। পুরোটাই নিখরচায়। সম্ভাষণ শিবির তথা পাঠ্যক্রম শেষ হওয়ার পর শুরু হচ্ছে পত্রাচার। সেখানে সংস্কৃত ভাষায় লেখা শেখানো হচ্ছে।ছ’মাস পর পরীক্ষা। পাঠ্যক্রম শেষে মেলে শংসাপত্রও। তা ছাড়াও চলছে গীতা শিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে গীতা পাঠ ছাড়াও সংস্কৃত উচ্চারণের বিভিন্ন দিক গুলি তুলে ধরা হয়। এবং বাড়িতে গীতা পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর উপরও জোর দিয়েছে সংস্কৃতভারতী।

সংগঠনটির দাবি, সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বহুদিন ধরেই চলছে এই প্রয়াস। তবে ঘাটালে এর আগে এ ধরনের শিবির কবে হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না স্থানীয় প্রবীণ মানুষের অনেকেই। সংস্কৃতভারতীর মেদিনীপুর বিভাগ সংযোজক অরুণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ আমাদের মূল লক্ষ্য সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসার। আমরা সেই কাজটাই করছি। ঘাটাল বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ এই শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। নিয়ম করেই শিবির চলছে। তার ফলে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাতেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা বাড়ছে।” সংগঠনটির আরও দাবি, রাম মন্দিরের উদ্বোধনের সঙ্গেও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে সংস্কৃতভারতীর সঙ্গে যুক্ত অনেকেই অবশ্য সঙ্ঘের সদস্যও। গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নন এমন কেউ যে সংস্কৃতভারতীর সঙ্গে যুক্ত নন তা জোর গলায় বলা না গেলেও প্রতিষ্ঠানের অনেকেই এ কথা মেনে নিচ্ছেন যে, মোটের উপর সম মতাদর্শের লোকেরাই দেবভাষা প্রচার ও প্রসারে যুক্ত। আরএসএসের মেদিনীপুর জেলা কাযবার্হ সমীরণ গোস্বামী বলেন, “ঘাটালে অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতভারতীর তরফে সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসার চলছে। ঘাটালেও দ্রুত রামমন্দির নিয়ে প্রচার শুরু হবে।’’

ভাষা। ধর্ম। রাজনীতি। তিন পৃথক বিন্দু কখনও জুড়ে যায় এক সরলরেখায়। তাই এ নিয়ে আশঙ্কিত বিরোধীরা। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘সংস্কৃত ভাষা বহুল চর্চিত ভাষা। এটা স্কুল কলেজে পড়ানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামগঞ্জে টোল খুলেছেন। পুরোহিত ভাতা দেন। কিন্তু এমন কিছু করেন না যাতে সংস্কৃত নিয়ে কোনও বিতর্ক সামনে আসে। সংস্কৃতকে সম্মান করি। বিজেপি যে ভাবে মাতামাতি করছে তার পিছনে অন্য অভিসন্ধি থাকতে পারে। আমাদের নজরে রাখতে হবে যাতে কোনও ভারসাম্য নষ্ট না হয়।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, ‘‘সংস্কৃত ভাষা আমরা সকলে জানি। পড়েছি। আগামী প্রজন্মও পড়বে। আসলে এর পিছনে আরএসএসের অন্য লক্ষ্য রয়েছে। সংস্কৃতকে সামনে রেখে তারা দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার পথে এগোচ্ছে।’’

তবে বিজেপির রাজ্য কমিটি সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভারতবর্ষে অনেক আগেই হিন্দু রাষ্ট্র বলে পরিচিত। আসলে সিপিএম তৃণমূল দু’জনেই রামকে ভয় পায়। তাই তারা মন্দিরে বিরোধিতা করে। রামের নাম শুনলেই তারা ভয় পায়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement